যোশীমঠে হিমবাহ ধসে নিখোঁজ মহিষাদলের ৩ যুবক

Spread the love

প্রকৃতির তান্ডবলীলায় ভয়াবহ হিমবাহ বিস্ফোরণের ফলে ভেসে গেছে উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলা। রবিবারের এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষাদলের যুবক সুদীপ গুড়িয়া(২৭), লালু জানা(৩০), বুলু জানা(২৯)। চামোলি জেলায় কর্মরত ছিল তারা।

জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, সুদীপের বাড়ি মহিষাদলের চক-দ্বারিবেড়িয়া গ্রামে এবং লালু ও বুলুর বাড়ি লক্ষ‍্যা গ্রামে। দুর্ঘটনার পর থেকে পরিবারের সঙ্গে কোনওরকম যোগাযোগ হয়নি তাদের। তারা থাকতো চামোলি জেলার তপোবন এলাকায়। নিখোঁজদের খোঁজে উদ্বিগ্ন পরিবার পরিজনেরা।

গত বছরের মার্চ মাসে উত্তরাখণ্ডের ঋষিগঙ্গা বিদ্যুৎ প্রকল্পে কাজে যান মহিষাদলের চক- দ্বারিবেরিয়া গ্রামের সুদীপ গুড়িয়া। তার সাথে যায় ঠিকাদার লালু জানা ও তার ভাই বুলু জানা। সুদীপ বাড়ির লোকজনদের বলে যায় এক বছরের মধ্যে আবার সে বাড়ি আসবে।

উত্তরাখণ্ডে কাজে যাওয়ার পর প্রায় নিয়মিত ফোনে কথা হতো গ্রামে থাকা বৃদ্ধ পিতা বৈদ্যনাথ গুড়িয়া ও বেহুলা গুড়িয়ার সঙ্গে। প্রায়ই বড় দাদা প্রদীপ গুড়িয়াকে ফোন করে ভাইপোর খোঁজ নিত সুদীপ। দুর্ঘটনার আগে গত শনিবার রাতে পরিবারের সঙ্গে শেষ কথা হয় সুদীপের। বাড়ির সদস্যদের ফোনে সুদীপ জানিয়েছিল সে ভালো আছে। বৌদির কাছে জানতে চেয়েছিল আলু ভাজা কিভাবে সুস্বাদু করা যায়। এটাই ছিল সুদীপের সাথে পরিবারের শেষ কথা। একই ভাবে লালু ও বুলুর সাথেও শনিবার শেষ পরিবারের সঙ্গে কথা হয়।

যোশীমঠে হিমবাহ ধসের পর থেকে নিখোঁজ তিনজন। দুর্ঘটনাস্থলেই বিদ্যুৎ প্রকল্পের ভেতরে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিল তারা। রবিবার ছুটির দিন থাকলেও অতিরিক্ত পারিশ্রমিকের জন্য কাজে গিয়েছিল সুদীপ। তবে মেসে থেকে গিয়েছিলো সুদীপেরই এক সহকর্মী। তারই কথা মতো রবিবারের দুর্ঘটনার পর থেকে সুদীপের সাথে কোনরকম যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। তিনজনেরই পরিবারের তরফ থেকে মোবাইলে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তাদের মোবাইল বন্ধ। এমন পরিস্থিতিতে সুদীপ, লালু ও বুলু আগের মত সুস্থ অবস্থাতেই বাড়ি ফিরুক ভগবানের কাছে এখন এটাই প্রার্থনা করছেন তিনজনের পরিবার। তবে সময় যত গড়িয়ে যাচ্ছে ততই নিরাশ হয়ে পড়েছে পরিবার। কান্নার রোল উঠতে শুরু করেছে পরিবার-পরিজনদের মধ্যে।

ছোট ভাইকে ফিরে পাওয়ার আশা নিয়ে সুদীপের বড় দাদা প্রদীপ গুড়িয়া বলেন, “ভাইয়ের সঙ্গে গত শনিবারেও আমাদের কথা হয়েছে। ভাই বলেছিল সে ভালো আছে। খুব শীঘ্রই বাড়ি ফিরে আসবে বলে বলেছিল সে। কিন্তু রবিবার দুর্ঘটনার পর থেকে ভাইয়ের আর কোনো খোঁজ পাচ্ছিনা। ভগবানের কাছে করজোড়ে প্রার্থনা ভাইকে যেন সুস্থ অবস্থায় আমরা ফিরে পাই।

একইভাবে লালু ও বুলুর পরিবার পরিজনদের বক্তব্য, “কিছুদিন আগে কথা হয়েছে ভালো আছে বলে। এরপর রবিবারের পর থেকে আর কোনোরকম খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।ইতিমধ্যে স্থানীয় মহিষাদল থানার দ্বারস্থ নিখোঁজ তিনজনের পরিবার। দ্রুত খোঁজ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মহিষাদল থানার ওসি স্বপন গোস্বামী।

১২ ফেব্রুয়ারি গ্রামে ফেরার কথা ছিল সুদীপের। শনিবার রাতে পরিজনদের সঙ্গে কথা হয় তাঁর। ছেলে ঘরে ফেরার আনন্দে মেতে ছিল গোটা পরিবার। আচমকা এমন ঘটনায় যেন সবই বদলে গিয়েছে। ট্যাংরাখালি গ্রামের নিখোঁজ শ্রমিক লালু জানা এবং বুলা জানার পরিবারের অবস্থাও একইরকম। দুর্ঘটনার দিন সকাল আটটার সময় বাবা ধ্রুব জানার সঙ্গে কথা হয় লালুর।

অন্যদিকে মহিষাদলের পাশাপাশি এই বিপর্যয়ে নিখোঁজ পুরুলিয়ার দুই শ্রমিক। সুমন্ত ও অশ্বিনী তন্তুবায় নামে এই দুই যুবক জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কর্মরত ছিলেন। সবমিলিয়ে উত্তরাখণ্ডের এই বিপর্যয় গোটা দেশকে আরও একবার নাড়িয়ে দিল।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*