শবরীমালা বিতর্কের আঁচ এখনও নেভেনি পুরোপুরি। তার মধ্যেই সামনে এল উত্তরাখণ্ডের একটি গ্রামের ঘটনা। সেখানে রাস্তার পাশে রয়েছে মন্দির। তাই ঋতুমতী মহিলাদের ওই মন্দির-সংলগ্ন রাস্তা দিয়েই যাওয়া বারণ। আর এই বারণের প্রকোপে, মাসে পাঁচ দিন করে স্কুলে যাওয়া বন্ধ কিশোরীদের। কারণ ঋতুমতী থাকা অবস্থায় তারাও যেতে পারবে না মন্দিরের পাশ দিয়ে!
হ্যাঁ, এখনও এতটাই কঠিন মেনস্ট্রুয়েশন ট্যাবুর মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে এই দেশের কোনও কোনও প্রান্ত। উত্তরাখণ্ডের পিথোরাগড় তেহসিলের রৌতগড়া গ্রামের এই ঘটনায় আরও এক বার সামনে এল সংস্কারের পাঁকে নিমজ্জিত সমাজের দশা।
সূত্রের খবর, রৌতগড়া গ্রামের পথের ধারেই রয়েছে ছোট্ট এক মন্দির। স্থানীয়দের বিশ্বাস, মন্দিরের পাশ দিয়ে কোনও ঋতুমতী মহিলা পার হলে দেবী অসন্তুষ্ট হতে পারেন। তাই গ্রামের সব মহিলাই ‘ওই ক’টা দিন’ এড়িয়ে চলেন মন্দিরের পথ। ঘটনাচক্রে, ওই পথ দিয়েই স্কুলে যেতে হয় গ্রামের মেয়েদের। এই কুসংস্কারের জেরে, পিরিয়ডস হলে তাদেরও ওই পথে যেতে দেয় না তাদের পরিবার। দ্বিতীয় পথ না থাকায়, পাঁচ দিন করে স্কুলেই যায় না তারা। তবে কিছু কিশোরী নাছোড়। তারা কিছুতেই বন্ধ রাখবে না স্কুল। তাই তারা প্রতি মাসে পিরিয়ডসের নির্দিষ্ট তারিখের আগেভাগেই অন্য গ্রামে কোনও আত্মীয়ের বাড়ি চলে যায়। যাতে স্কুলে যাওয়ার জন্য ওই ‘পবিত্র’ পথ পেরোনোর সমস্যা না হয়।
উত্তরাখণ্ড মহিলা মঞ্চ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে প্রথম সামনে আনা হয় এই ঘটনাটি। সংগঠনের এক সদস্য বলেন, “চামু দেবী নামে স্থানীয় এক ঠাকুরের মন্দির রয়েছে রাস্তার ধারে। সেখান দিয়ে কিছুতেই বাড়ির মেয়েদের ঋতুমতী অবস্থায় যেতে দেওয়া হয় না স্কুলে। স্কুলের তরফে অনেক চেষ্টা করা হয়েছে এই সংস্কার ভাঙার। কিন্তু গ্রামের পরিবারগুলি তা মানতে নারাজ। তাই প্রতি মাসে পাঁচ দিন করে স্কুল কামাই করতে বাধ্য হয় কিশোরীরা।”
চমকে যাওয়ার মতো হলেও, বস্তুত এই ঘটনা নতুন কিছুই নয়। পিরিয়ডস নিয়ে নানা রকম ট্যাবুতে আচ্ছন্ন সমাজে এরকম নিদর্শন বড় কম নয়। মন্দিরে ঢুকতে বাধা পাওয়া তো খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার, কিছু দিন আগেই সামনে এসেছিল তামিলনাড়ুর ঝড়ে মারা যাওয়া মেয়েটির ঘটনা,
কিন্তু এই সমস্ত সংস্কারকে ছাপিয়ে গিয়েছে, মন্দিরের পাশের রাস্তা দিয়েও হাঁটতে না দেওয়ার ফতোয়া। তবে আশা, যে কিশোরীরা নিয়ম ভেঙে অন্য গ্রামে গিয়েও চালু রাখছে স্কুলে যাওয়া, তাদের হাত ধরেই হয়তো কোনও এক দিন আসবে পরিবর্তন, ভাঙবে অচলায়তন।
Be the first to comment