চুরি-ডাকাতির পর পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে নিজের ডেরা পাল্টায় অনেক অপরাধীই। তাই বলে একেবারে জঙ্গলে ঢুকে গাছের উপর খুপড়ি বানিয়ে সেখানে থাকা! দিল্লির ডাকাত রানি বাসিরান ও তার ছেলেরা কিন্তু পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে এই পদ্ধতিই ব্যবহার করত। সেটা জানতে পেরে চক্ষু চড়কগাছ পুলিশের।
উত্তরপ্রদেশের আগ্রার বাসিন্দা বাসিরানের সঙ্গে বিয়ে হয় রাজস্থানের ঢোলপুরের যুবক মালখানের। কিন্তু বিয়ের পরেই মালখান দেখে তার স্ত্রী ধীরে ধীরে অপরাধ জগতে প্রবেশ করছে। প্রথমে ছোটখাটো থেকে শুরু করে আস্তে আস্তে বড় অপরাধ শুরু করে সে। এই কাজে সে নিজের আট ছেলেকেও লাগায়। মালখান ও বাসিরানের চার মেয়ে বাবার সঙ্গে থেকে যায়। বাসিরান ছেলেদের নিয়ে চলে আসে দিল্লি।
তারপর রাজধানীর বুকে শুরু হয় তাদের অপরাধের কর্মকাণ্ড। চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি কী নেই তাদের অপরাধের তালিকায়। দিল্লির প্রায় প্রত্যেকটা পুলিশ স্টেশনে তাদের নামে অপরাধের কেস দায়ের করা আছে। বছর ৬২-র বাসিরানের বড় ছেলে শামিমের নামেই শুধুমাত্র চুরি, ডাকাতি, অপহরণের ৪২ টি মামলা রয়েছে।
কিন্তু বার বার তাদের ডেরায় হানা দিয়েও কারও টিকি ধরতে পারছিল না দিল্লি পুলিশ। কিছুদিন আগে এক জায়গায় ডাকাতি করতে গিয়ে তাদের তিন ভাই ধরা পড়ে। দুদিন পরে এক ভাই জামিনে ছাড়া পেয়েই বেপাত্তা হয়ে যায়। বাকি দুই ভাইকে লাগাতার জেরার পরেই উঠে আসে আসল ঘটনা। আর তা শুনেই অবাক হয়ে যান পুলিশ অফিসাররা।
বাসিরানের বাড়ি লাগোয়া জঙ্গল। আর এই জঙ্গলের সুযোগ নিয়েই পুলিশের চোখে ধুলো দিত তারা। পুলিশ আসছে খবর পেলেই জঙ্গল গিয়ে লুকিয়ে পড়ত আট ভাই। তবে যে সে লুকানো নয়, একেবারে গাছের ডালে অস্থায়ী খুপড়ি বানিয়ে থাকতো তারা। রাতের বেলা বাসিরান গিয়ে তাদের খাবার দিয়ে আসত।
আর এই ডেরা কিন্তু এক জায়গায় ছিল না। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গাছের উপর এই অস্থায়ী খুপড়ি বানিয়ে তারা থাকতো। সেই ডেরাগুলো একটা অন্যটার থেকে বেশ দূরে দূরে থাকতো। তাই পুলিশ জঙ্গলে ঢুকেও তাদের কোনও হদিশ পেত না। এই খবর জানতে পেরে জঙ্গলে হানা দিয়ে অবশ্য পুলিশ তাদের সব থেকে ছোট ভাইকে আটক করে। কিন্তু জেরা করে জানা যায় সে এখনও নাবালক। সে নিজে কিছু করত না। চুরি, ডাকাতিতে বাকি ভাইদের সাহায্য করত সে।
এই ডেরার হদিশ জেনে যাওয়ার পর থেকে বাসিরানও পলাতক। তবে পলাতক অবস্থা থেকেই নিজের জামিনের আবেদন করেছে বাসিরান। সেই আবেদন খারিজ করা হয়েছে। আপাতত তিন ভাই পুলিশের জালে। বাকি পাঁচ ভাই ও তাদের মায়ের উদ্দেশে জঙ্গলের ভেতর গাছের উপর তৈরি অস্থায়ী খুপড়ির খোঁজ করছে পুলিশ।
Be the first to comment