তপন মল্লিক চৌধুরী
আদালতে বিচার করা হয় সমাজে ঘটে যাওয়া নানা অন্যায়ের। সাধারণত বড় বড় অপরাধের বিচারের জন্যই মানুষ আদালতের দ্বারস্থ হয়ে থাকেন। এর মধ্যে খুন, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতির মতো ঘটনা যেমন থাকে, তেমনি জমি-জায়গা-ঘরবাড়ি নিয়ে পারিবারিক বিবাদ-বৈবাহিক সম্পর্কজনিত অশান্তির মামলাও থাকে। কিন্তু ইতালির একটি আদালতে এমন একটি ঘটনা নিয়ে মামলা চলছে যার নজির মনে হয় দুনিয়াতে দ্বিতীয়টি খুজে পাওয়া যাবে না। ইতালির ওই আদালতে নয় বছর ধরে চলেছে বেগুন চুরি নিয়ে মামলা।
বেগুন চুরির দায়ে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই অভিযুক্ত ব্যক্তির বসবাস ইতালির দক্ষিণাঞ্চালীয় লিস শহরের উপকণ্ঠে। স্ত্রী এবং এক সন্তান নিয়ে অত্যন্ত টানাটানির সংসার তার। একবেলা খাবার জোটে তো অন্য বেলা উপোস। খিদের তাড়নায় একদিন সাত পাঁচ না ভেবে প্রতিবেশী একজনের বেগুনের জমিতে ঢুকে পড়েন সেই লোক। মালিকের অগোচরে কিছু বেগুন নিয়ে সটকেও পড়েন। তবে মালিকের কাছে ধরা না পড়লেও সেই লোক পুলিশের চোখে ধুলো দিতে পারে না।
ঘটনাটি ঘটেছিল আজ থেকে প্রায় নয় বছর আগে। ঘটনার পর পুলিশ বাদি হয়ে ওই ব্যক্তির নামে নিম্ন আদালতে মামলা করে। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এই ব্যক্তি তার কষ্টকর জীবনের কথা সবিস্তারে কবুল করে। পাশাপাশি এ কথাও জানিয়েছিলেন, কর্মহীন হওয়ায় ও তার ঘরে কোনো খাবার না থাকায় তিনি সবজি চুরি করতে বাগানে ঢুকতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু বেগুন চুরি করেননি।
অভিযুক্ত ব্যক্তির দুঃখের কথা শুনে মন গলে নিম্ন আদালতের বিচারকের। যদিও একশ বিশ ইউরো (১ইউরো=১০৫ টাকা) জরিমানা করা হয় তাকে সঙ্গে দেয়া হয় দুই মাসের জেল। তবে এই শাস্তিতে খুশি হয়নি স্থানীয় লিগ্যাল কাউন্সিল। তারা উচ্চ আদালতে এ বিষয়ে আপিল করে।
এরপর নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মামলাটি চলতেই থাকে। শেষ পর্যন্ত গড়িয়েছে নয় বছর। অবশেষে মামলাটির নিষ্পত্তি হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিটি চুরির কথা স্বীকার করে নেওয়ার ফলে উচ্চ আদালত তার সাজা বেশ খানিকটা মুকুব করে দিয়েছে। এছাড়া তার মানবিক দিকের কথা বিবেচনা না করে জনগণের করের টাকায় দীর্ঘদিন ধরে মামলা পরিচালনা করার জন্য নিম্ন আদালতকে তীব্র ভৎর্সনা করেছে।
Be the first to comment