উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ৮ জনকে এনকাউন্টারে মারার মূল অভিযুক্ত বিকাশ দুবে শুক্রবার সকালে কানপুরের কাছেই মারা যায়৷ উত্তরপ্রদেশের এসটিএফ -র গাড়ি উল্টে যাওয়ার পর সে এক পুলিশের পিস্তল নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে ৷ সে সময় তাকে আত্মসমর্পণ করার কথা বলা হয় ৷ কিন্তু গ্যাংস্টার দুবে সে সময় পুলিশের ওপর গুলি চালাতে শুরু করেছিল ৷ পুলিশের পাল্টা ফায়ারিংয়ে সে মারা যায় ৷
এরপর বিকাশ দুবের দেহ হৈলট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানেই তার পোস্টমর্টেম করা হয় ৷ কিন্তু এরপর যখন শবদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলা হয় তখন বিকাশের পরিবার তাঁদের খুনী ছেলের মৃতদেহ নিতে অস্বীকার করে ৷ পুলিশ বিকাশ দুবের বউকে ডেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জেরা করেছিল ৷ কানপুর এনকাউন্টারে তার কোনও যোগসাজশ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছিল ৷ তবে এই জেরায় তাঁকে নির্দোষ পাওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয় ৷ এই জেরার সময় বিকাশের স্ত্রী-র সঙ্গে তাঁর নাবালক পুত্র সন্তানও ছিল ৷
মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল চিকিৎসক জানিয়েছে গ্যাংস্টার বিকাশ দুবের বুকে তিনটি গুলি লেগেছিল ৷ এছাড়াও একটা গুলি হাতে লেগেছিল ৷ তিনি আরও জানিয়েছেন বিকাশ দুবেকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ এরপর তার করোনা পরীক্ষাও করা হয় ৷ বিকাশ দুবের এনকাউন্টারের সময় ২ জন পুলিশ আধিকারিকও আহত হয়েছে তাদের চিকিৎসা চলছে ৷
এদিকে এর আগে গ্যাংস্টার বিকাশ দুবের এনকাউন্টার নিয়ে একাধিক প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে উত্তর প্রদেশ পুলিশকে ৷ কানপুরের ডনের সঙ্গে পুলিশের এনকাউন্টারের কিছুক্ষণ আগেই কেন সংবাদমাধ্যমকেও পুলিশের কনভয়কে ধাওয়া করা থেকে আটকানো হল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ৷
বৃহস্পতিবার মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনী থেকে গ্রেফতার করা হয় বিকাশ দুবেকে৷ রাতেই সড়কপথে বিকাশ দুবেকে নিয়ে কানপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় পুলিশ৷ কড়া নিরাপত্তার মধ্যে নিয়ে আসা হচ্ছিল বিকাশকে৷ পুলিশের কনভয়ে ছিল বেশ কয়েকটি গাড়ি৷ বিকাশ দুবেকে নিয়ে পুলিশ ফেরায় ওই কনভয়ের পিছু নিয়েছিল কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের গাড়িও৷
অভিযোগ, ভোর সাড়ে ৬টা নাগাদ কানপুরের সাচেন্ডি এলাকায় হঠাৎই সংবাদমাধ্যমের গাড়ি আটকে দেয় পুলিশ ৷ ফলে তারা আর বিকাশ দুবেকে নিয়ে যাওয়া কনভয়ের পিছু নিতে পারেনি ৷ এর কিছুক্ষণের মধ্যেই এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটে৷ ঝাঁসিতেও সংবাদমাধ্যমের গাড়ি পুলিশ আটকে দেয় বলে খবর ৷ এনকাউন্টারের ঠিক আগে কেন এভাবে সংবাদমাধ্যমের গাড়ি পুলিশ আটকাল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই এনকাউন্টারের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা ৷ ফলে ঘটনার সাক্ষী না রাখতেই সংবাদমাধ্যমকে আটকানো হয় বলে অভিযোগ উঠছে ৷
পুলিশ দাবি করে, যে গাড়িতে বিকাশকে নিয়ে আসা হচ্ছিল সেটি আচমকা উল্টে যায়৷ সেই সময় পুলিশের বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে বিকাশ দুবে ৷ তাঁকে আত্মসমর্পণ করতে বলে পুলিশ ৷ তা না করে বিকাশ পাল্টা গুলি চালাতে শুরু করে বলে অভিযোগ ৷ তখনই আত্মরক্ষার স্বার্থেই গুলি চালাতে বাধ্য হয় পুলিশ৷ গুলির লড়াইতে গুরুতর আহত হয় বিকাশ ৷ পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত্যু হয় বিকাশ দুবের ৷
শুধু সংবাদমাধ্যমকে আটকানোই নয়, এনকাউন্টারের ঘটনায় আরও একাধিক প্রশ্ন উঠছে। যেমন বিকাশ দুবে যখন উল্টে যাওয়া গাড়িতে থাকা পুলিশকর্মীদের কাবু করে বেরিয়ে গেল, তখন কনভয়ে থাকা অন্যান্য গাড়ির পুলিশকর্মীরা তাকে বাধা দিলেন না কেন, সেই প্রশ্ন উঠছে ৷ পালানোর চেষ্টা করে থাকলে বিকাশ দুবের বুকে কীভাবে গুলি লাগল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ৷ পুলিশের অবশ্য দাবি, আত্মসমর্পণ না করে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় বিকাশ৷ তারই জবাব দেয় পুলিশ ৷
Be the first to comment