
রোজদিন ডেস্ক, কলকাতা:- গত কয়েকদিন ধরেই অগ্নিগর্ভ মুর্শিদাবাদ। ভাঙচুর – অগ্নিসংযোগ-লুঠপাঠ থেকে খুন, কোনও ঘটনাই কার্যত বাদ যায়নি। এমন অশান্তির পরিবেশ তৈরির পেছনে যে কারও প্ররোচনা ছিল, সেই কথা কার্যত মেনে নিল পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। এই নিয়ে তথ্যও পুলিশের কাছে রয়েছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
সোমবার মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি নিয়ে ভবানী ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামীম। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘জঙ্গিপুর, সুতি, ধুলিয়ান-সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় যে হানাহানির ঘটনা ঘটেছে, সেখানে কারও না কারও প্ররোচনা ছিল। সেটা হতে পারে কোনও রাজনৈতিক সংগঠনের প্ররোচনা। আমরা সব বিষয়গুলি খতিয়ে দেখছি। প্রত্যেককে গ্রেফতার করব।’’
উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন ধরেই জ্বলছে মুর্শিদাবাদ। পথ অবরোধ থেকে বিক্ষোভ হয়েছে। পুলিশের গাড়ি জ্বলেছে। সরকারি অফিস, রেলের সম্পত্তিতে তাণ্ডব চালানো হয়েছে। সাধারণ মানুষের বাড়ি, দোকান, কোনও কিছুই অশান্তির আঁচ থেকে বাঁচতে পারেনি। দু’জনকে কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠেছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন মারা গিয়েছেন। জখম আরও বেশ কয়েকজন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শুক্রবার রাতেই প্রশাসনের অনুরোধ মুর্শিদাবাদের একটা অংশে বিএসএফ নামানো হয়। কিন্তু অশান্ত অঞ্চলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেই মামলায় মুর্শিদাবাদের বেশ কিছু এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেয় আদালত। তার পর থেকে ওই জেলায় চলছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর রুট মার্চ। রাজ্য পুলিশও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সচেষ্ট।
সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামীম। সেখানে তিনি প্ররোচনার বিষয়টি উল্লেখ করা ছাড়াও বলেন, ‘‘২০০ জনের বেশি গ্রেফতার হয়েছে। এখন অবধি প্রচুর মানুষ ভয়ের মধ্যে আছে। তাঁদের ভয় কাটানো আমাদের কাজ। গত ৩৬ ঘণ্টায় কোনও নতুন অশান্তি হয়নি।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রচুর গুজব কানে আসছে। গতকালও (রবিবার) এক ব্যক্তি আমাদের ফোন করে বলে এলাকায় প্রচুর বোমা উদ্ধার হয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি কিছুই নেই। এই সবের জন্য মানুষের মধ্যে ভয় বাসা বাঁধছে। এই ভয় দূর করতে আগে গুজব বন্ধ করতে হবে। তাই যাঁরা গুজব ছড়াচ্ছেন, তাঁদের আমরা নোটিশ দিচ্ছি।’’ একই সঙ্গে তিনি জানান যে রাজ্য পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা ধুলিয়ান, সুতিতে আছেন। টহলদারি চলছে। মালদা পুলিশ গতকাল (রবিবার) অনেক পরিবারকে মালদা থেকে ধুলিয়ান জঙ্গিপুরে তাঁদের নিজেদের বাড়িতে ফেরত পাঠিয়েছেন। জাভেদ শামীম বলেন, ‘‘এই ঘটনায় আমরা কাউকে ছাড়ব না। প্রচুর এফআইআর হয়েছে। আজও হচ্ছে।’’
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অন্য রাজ্যের পুলিশের সঙ্গেও তিনি তুলনা টানেন এডিজি (আইনশৃঙ্খলা)। তিনি বলেন, ‘‘অন্য রাজ্যে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে পুলিশ যতক্ষণে পরিস্থিতি সামাল দেয়, আমরা তার থেকে অনেক কম সময় নিয়েছি।’’ পাশাপাশি তিমি মনে করিয়ে দেন যে রাজ্যে কোথাও প্রতিবাদ কর্মসূচি হচ্ছে। আবার কোথাও উৎসব পালন হচ্ছে। তার মধ্যে ঈদ গেল, হনুমান জয়ন্তীও গেল। সব জায়গায় পুলিশ ছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল।
Be the first to comment