বিভিন্ন দেশে রেকর্ড সংখ্যায় নারীরা নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন। রাজনীতির দুনিয়ার চেহারাটাই পাল্টে দিচ্ছেন তাঁরা। বিভিন্ন দেশের জাতীয় আইনসভায় লিঙ্গ সমতা আনার ক্ষেত্রেও অগ্রগতি অনেক। মেক্সিকোর সাম্প্রতিক নির্বাচনে দেশটির পার্লামেন্টে দুটি কক্ষেই সমান সংখ্যায় নারী ও পুরুষ এমপিরা নির্বাচিত হয়েছেন। স্পেন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বদলানোর পর এই প্রথম দেশটির মন্ত্রিসভায় পুরুষদের চেয়ে বেশি সংখ্যায় নারীদের মনোনীত করা হয়েছে গত জুন মাসে। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন গত ২১ জুন কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। তিনি হলেন সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে মা হওয়া দ্বিতীয় কোন নারী। এর আগে দায়িত্ব পালনকালে মা হওয়া প্রথম ব্যক্তি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো।
বর্তমানে বিশ্বে ১১ জন নারী নেতা রয়েছে যারা নিজ নিজ দেশের সরকার প্রধান। এর সঙ্গে যদি ‘হেডস অব স্টেট’ অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় প্রধান ব্যক্তিদের নাম যোগ করা হয় তাহলে এই সংখ্যা হবে ২১। ২০১৭ সালে পিউ রিসার্চের এক গবেষণা অনুযায়ী, গত অর্ধশতকে অন্তত একবছর করে হলেও ১৪৬ দেশের মধ্যে ৫৬টি জাতি একজন নারী রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধান কিংবা রাষ্ট্রীয় প্রধান পেয়েছে। এর মধ্যে ৩১টি দেশের নারী প্রধানদের শাসনকাল পাঁচ বছর মেয়াদি কিংবা তারও কম সময় এবং ১০টি দেশে কেবল এক বছরের মেয়াদ।
বর্তমানে সবচেয়ে দীর্ঘসময় ধরে ক্ষমতায় থাকা নারী সরকার প্রধান জার্মানির অ্যাঞ্জেলা মের্কেল। ২০০৫ সালে এই জার্মান নেতা দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সরকার প্রধান হিসেবে তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় রয়েছেন। এর বাইরে অন্যান্য নারী সরকার প্রধানদের মেয়াদ পাঁচবছর বা তারও কম সময়ের। নিউজিল্যান্ডের জেসিন্ডা আরডার্ন, আইসল্যান্ডের নেতা কাটরিন জ্যাকবসডোত্তির এবং সার্বিয়ার আনা বার্নাবিক এরা সবাই ২০১৭ সালে নির্বাচিত হন।
নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এর্না সোলবার্গ নির্বাচিত হন ২০১৩ সালে। নামিবিয়াতে ২০১৩ সালে দায়িত্ব নেন সারা কুগংগেলাওয়া। ব্রিটেনের টেরিজা মে ২০১৬ দেশটির দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নাম লেখান। একই বছর অং সাং সু চি মিয়ানমারে দায়িত্ব নেন। ২০১৮ সালে নির্বাচিত ভিওরিকা ড্যান্সিলা রোমানিয়ার ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন। মিয়া মোটলি ২০১৮ সালে বার্বাডোজের প্রথম নারী প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন। কিন্তু আইপিইউ এর জেন্ডার পার্টনারশিপ কর্মসূচির দায়িত্বে থাকা জেইনা হিলাল বলেন, নারী ও পুরুষের সমান প্রতিনিধিত্বের অগ্রগতির ধারা গেল দুই কিংবা তিন বছরে স্থির হয়ে আছে বলে মনে হয়। আমরা হতাশ এবং কিছুটা বিস্মিত হয়েছি কারণ কিছু বছর আগে অগ্রগতির হার ছিল প্রায় শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ। কিন্তু ২০১৬ ও ২০১৭ পরপর দুই বছর অগ্রগতির হার ছিল শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। এটা সত্যিই উদ্বেগের। আইপিইউ ধারণা করছে, যদি বর্তমান এই ধারা চলতে থাকে, তাহলে পার্লামেন্টে নারী-পুরুষ জেন্ডার সমতা অর্জনে কমপক্ষে আড়াইশো বছর সময় লেগে যাবে।
Be the first to comment