নারী দিবসের প্রয়োজনীয়তা আছে কি? কি বলছেন বিশিষ্ট মহিলারা

Spread the love

ডোনা গাঙ্গুলি, নৃত্যশিল্পী

ডোনা গাঙ্গুলি, নামই পরিচয়। ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেট ক্যাপ্টেনের স্ত্রী। মহম্মদ আলি জিন্নার একটি বক্তব্য এখানে খুবই প্রাসঙ্গিক। তা হল, ‘no struggle can ever succeed without women. Participating side by side with men.’ সৌরভ গাঙ্গুলির সাফল্যের ক্ষেত্রে ডোনার ভূমিকা অনস্বীকার্য্য। পাশাপাশি বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী ডোনা, গুরু কেলুচরণ মহাপাত্র’র সুযোগ্য শিষ্যা। নৃত্য তাঁর কাছে সাধনা। স্টেজ পারফরমেন্সও করেন তিনি। ওডিশি নৃত্যশৈলীর মধ্য দিয়ে প্রভু জগন্নাথের বন্দনা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত।

মেয়ে সানা, স্বামী সৌরভ, সংসার সবই সামলান দায়িত্বভরে। শুধু এইটুকুই নয় বাড়ির কাছেই করেছেন নাচের স্কুল – ‘দীক্ষা মঞ্জরী’। বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে এমনকি রাজ্যের বাইরে থেকেও তাঁর কাছে নাচ শিখতে আগ্রহী অনেকে। ৮ই মার্চ বিশ্বনারী দিবস উপলক্ষ্যে ডোনার মতামত জানতে চেয়েছিলাম আমরা। তাঁর সোজা সাপ্টা জবাব, এই দিনটি সেলিব্রেট করিনা। কই পুরুষদের জন্য কোনো দিন হয় না তবে মহিলাদের জন্য আলাদা দিন কেন? মহিলারাতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তবে একটা দিন পালন করে কেন, চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া যে তোমরা আসলে অনেক পিছিয়ে আছ।

পুরুষের কাজ একধরণের, মহিলারা আরেকধরণের কাজ করবেন, সমাজের চাপিয়ে দেওয়া এই নিয়মকে ভেঙে ফেলতে হবে। আমার শ্বশুর মশাই চন্ডী গাঙ্গুলি তাঁর দুই ছেলেকে ছোটবেলায় স্নান করে ভাত খাইয়ে দিতেন, এটা তিনি নিয়মিত করতেন। তাতে ক্ষতি কি? তেমনি মেয়েরাও ফাইটার পাইলট হচ্ছে। প্লেন চালানো শুরু হয়েছে বহু আগে থেকেই। আরো পেছনে যদি আমরা ফিরে তাকাই তাহলে দেখবো বৈদিক যুগে ঘোষা, বিশ্ববারা, অপালা, লোপামুদ্রা তাঁদের কৃতিত্বের জন্য আজও স্মরণীয়। তারও একটু পরে, তাও দেড়শো বছর আগে কাদম্বিনি গাঙ্গুলি, আনন্দীগোপাল যোশি, চন্দ্রমুখী বসু ডাক্তারী পাশই শুধু করেনি, চিকিৎসা শাস্ত্রে বিশেষ ব্যুৎপত্তির পরিচয় দিয়েছেন। আমাদের জন্মেরও আগে দেশ পেয়েছে প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে। যাঁর যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতা প্রশ্নাতীত। ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিভা পাটিল নিশ্চয়ই নারী ক্ষমতায়নের একটা উদাহরণ তো বটেই। বাংলার বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো মহিলা, অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে উন্নয়নকে পাথেয় করে রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ইউ পি এ চেয়ারপার্সনও একজন মহিলা – সোনিয়া গান্ধী। আমাদের দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং বিদেশ মন্ত্রী যথাক্রমে নির্মলা সিতারমণ এবং সুষমা স্বরাজ, তাঁরাও তো মহিলা। ইউপিএ আমলে আমরা মহিলা স্পিকার মীরা কুমারকে আর এনডিএ আমলে বর্তমান মহিলা স্পিকার সুমিত্রা মহাজনকে পেয়েছি। ফাইট কোনি ফাইট – অদম্য জেদ, দঙ্গলের রেসলার, চাকদে ইন্ডিয়ার মহিলা হকি দল শুধু গল্প কথা বা সিলভার স্ক্রিনে দেখা ছবি নয় বাস্তবের মাটিতে ফ্লোজো, স্টেফি গ্রাফ, সাবাতিনি, দুই উইলিয়ামস বোন কত নাম করবো! আমাদের দেশে ক্রীড়া ক্ষেত্রে বহু প্রতিকূলতাকে জয় করে এগিয়ে চলেছে মেয়েরা। পিটি উষা, সানিয়া মির্জা, সাইনা নেহওয়াল, পিভি সিন্ধু, দীপা কর্মকার, মিথালী রাজ, ঝুলন গোস্বামী, পৌলমি, মৌমা শুধু রাজ্যের গৌরব তা নয়, দেশের গৌরব। এইরকম সমস্ত পেশাতেই মেয়েদের উজ্জ্বল উপস্থিতি। অথচ অনেকে মনে করেন শিক্ষিতা মেয়েরা যতটা সম্ভব বাড়িতে থেকে স্বামী সন্তান পালন করলেই সমাজ এগিয়ে যাবে। আমি বলি তাহলে যে মেয়েটি তার পরিশ্রম ও মেধার মধ্য দিয়ে নিজেকে তৈরী করলো, তার অর্জিত গুনগুলি বিফলে গেলো। সে তো এর মাধ্যমে সমাজকে সমৃদ্ধ করতে পারতো। আমার মেয়ে সানা অক্সফোর্ড বা কেমব্রিজে পড়াশোনা করতে চায় আমি কি তাকে উৎসাহিত করবো না? বিদেশে পড়াশোনা শিখে ও নিশ্চয়ই এমন কিছু কাজ করবে যা দেশ, জাতি তথা বৃহত্তর ক্ষেত্রে মানুষের কাজে লাগবে।

আমি মনে করি নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত সব মেয়েদেরই অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অবশ্যই জরুরী। মেয়েদের নিরাপত্তার দিকটিও অবশ্যই চিন্তা করার বিষয় আছে। আসলে বদলাতে হবে আমাদের মানসিকতা। মেয়েরা এখন বিভিন্ন কাজে রাতে বিরেতেও বাড়ি ফেরে। পেশার তাগিদে সে তা করতে বাধ্য হয়। আমরাও তো নাচের গ্রুপ নিয়ে জেলায় জেলায় যাই, কিছু ক্ষেত্রে পুলিশকে জানিয়ে যথেষ্ট সুরুক্ষার প্রতিশ্রুতি নিয়েও যাই। তাই আমি অমিতাভ বচ্চনের এই লাইনগুলি সকলকে একটু চোখ বুলিয়ে নিতে বলবো, “We should save our boys, not the girls. Because if we save our boys then our girls will be safe.”। আমাদের এই বক্তব্যই মেনে চলা উচিত, “educate our boys, then girls will be safe”.

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*