
রোজদিন ডেস্ক, কলকাতা:- মহাকুম্ভে মহা বিপর্যয়। এলাহাবাদে কুম্ভ মেলায় পুণ্যার্থীদের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বিশেষ করে মৌনী অমাবস্যার দিন বহু মানুষ পদপিষ্ট হয়ে মারা গেছেন। এই মৃত্যু উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকারের অপদার্থতা এবং অমানবিকতাকে প্রকট করে তুলেছে বলে মনে করে দেশ বাঁচাও গণমঞ্চ। প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁরা উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথের পদত্যাগ দাবি করেন। শুধু যে পদপিষ্ট হয়ে মানুষ মারা গেছেন তা নয়, মেলায় চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলার শিকারও হয়েছেন পুণ্যার্থীরা। এ রাজ্য থেকেও বহু মানুষ কুম্ভ মেলায় গিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কুম্ভ স্নানে পদপিষ্ট হয়ে মৃত ব্যক্তিরা হলেন অমল পোদ্দার, অমিয় সাহা, মিঠুন শর্মা,বিনোদ রুই দাস,ঊর্মিলা ভূঁইয়া, বাসন্তী পোদ্দার।
পশ্চিমবঙ্গ সহ বিভিন্ন রাজ্যের মানুষদের মারা যাওয়ার পর তাঁদের মৃত্যুর শংসাপত্র দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে মৃত বাসন্তী পোদ্দারের ছেলে সুরজিৎ পোদ্দার এসেছিলেন। ভারাক্রান্ত হৃদয়ে চোখে জল নিয়ে তিনি তাঁর যন্ত্রণার কথা শোনান। বার বার বলেন মা কে আমি বাঁচাতে পারলাম না। ভিড়ের মধ্যে চোখের সামনে মা কে পদপিষ্ট হতে দেখেছেন। বার বার প্রশাসনের কাছে সাহায্য চাইলেও প্রথম দেড় ঘণ্টা কেউ কর্ণপাত করেন নি। শেষ পর্যন্ত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও মা কে বাঁচানো যায় নি। মৃতদেহের কোন ময়না তদন্তও হয়নি। ডেথ সার্টিফিকেট দূরস্ত কোন রকম কোন কাগজই দেওয়া হয়নি মৃত দেহের সঙ্গে। এইভাবেই তিনি তাঁর মা কে কলকাতায় ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছেন। পদপিষ্ট হয়ে মারা যান অপর এক ব্যক্তি বিনোদ রুই দাস। জামুরিয়ার কেন্দা গ্রামের বাসিন্দা। তার স্ত্রী শর্মিলা রুই দাস প্রশ্ন তোলেন,পরিবারের একমাত্র রোজগেরে মানুষ মারা গেলেন , স্বামীর মৃত্যুতে চোখে অন্ধকার দেখছেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘আমি নিজে খাব কি আর বাচ্চাদের কি খাওয়াব বা শ্বশুর শাশুড়িকে ই বা কি খাওয়াব।’ পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনী গোদাপিয়াশাল গ্রামের বাসিন্দা প্রয়াত ঊর্মিলা ভূঁইয়া র ছেলে দুলাল ভূঁইয়া তাঁর যন্ত্রণার কথা বলেন।
শুধু যে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে তাই নয়, অন্যান্য পুণ্যার্থীরাও নানাবিধ অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছেন।এই রকম ই এক অসুবিধার শিকার এক ব্যক্তি যাদবপুরের বাসিন্দা অভিষেক রায়।ট্রেনে যাত্রার সময় থেকে এলাবাদাদের রামবাগ পৌঁছনো পর্যন্ত এবং কুম্ভ মেলায় পৌঁছানো পর্যন্ত সর্বত্র চরম হেনস্থার শিকার হয়েছেন। তাঁর প্রয়াগরাজ স্টেশন থেকে কুম্ভ মেলায় পৌঁছানো পর্যন্ত সময় লেগেছে ৬ ঘন্টারও বেশি সময় । ক্ষুধায় কাতর হয়ে এই ৬ ঘণ্টা দিশাহারা হয়ে ঘুরেছেন।
দেশ বাঁচাও গণ মঞ্চের পক্ষে সাংবাদিক রন্তিদেব সেনগুপ্ত বলেন, কুম্ভ মেলার ভিআইপিদের জন্যে বিলাসবহুল ব্যবস্থা করা হয়েছে আর সাধারণ মানুষ পদে পদে বিশৃঙ্খলার সম্মুখীন হয়েছেন।উত্তর প্রদেশ পুলিশ ও প্রশাসন সমস্যা মোকাবিলায় একেবারেই অদক্ষ প্রমাণিত হয়েছেন। কুম্ভ মেলা নিয়ে যে গ্যাস বেলুন উড়িয়েছিলেন যোগী সরকার তা ফুটো হয়ে গেছে। রন্তিদেব বাবু বলেন, মৌনি অমাবস্যায় মৃতের সংখ্যা যোগী যা বলেছেন তার চেয়ে অনেক বেশি। কোন শংসাপত্র দেওয়া হয়নি, অবিলম্বে এই শংসাপত্র ক্ষতিপূরণের দাবি করেন তাঁরা এবং যোগী আদিত্যনাথের পদত্যাগও দাবি করেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত প্রাক্তন মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেন,যোগী বলেছিলেন ধর্মের পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্য হবে মেলায়। কিন্তু কোথায় ব্যবসা,আমরা কেন জানতে পারলাম না কোথায় ব্যবসা কত ব্যবসা হয়েছে? আসলে ধর্মের সাথে রাজনীতি কে মেলানো হল, কুম্ভমেলায় ধর্মের নামে একটি রাজনৈতিক দল এর ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করল। সরকারি মুখপত্র ও আরএসএস এর মুখপত্র মেলা নিয়ে যে ধরনের পরিস্থিতির কথা বলা হয়েছিল তা ছিটেফোঁটাও দেখা গেল না। তাহলে মানুষের প্রাণের কি কোন মূল্য নেই?
Be the first to comment