ঘরের মধ্যে স্বামী, স্ত্রী, সন্তানের গলাকাটা রক্তাক্ত দেহ। দশমীর সকালে এমন দৃশ্য দেখে চমকে উঠেছিলেন পড়শিরা। ঘটনাটির মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জের। মৃতরা হলেন ৩৩ বছর বয়সি বন্ধুপ্রকাশ পাল, স্ত্রী ২৮ বছর বয়সি বিউটি পাল ও ৬ বছরের ছেলে আর্য পাল। জিয়াগঞ্জের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের লেবুবাগানের ঘটনা। সেই খুনের তদন্তে এবার উঠে এল বেশ কিছু নতুন তথ্য।
পুলিশ সূত্রে খবর, শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল তাঁর গ্রাম সাগরদিঘির বারালা সাহাপুরে কয়েকজন প্রতিবেশীর কাছে টাকা ধার করেছিলেন। সেই টাকা আদায় করা নিয়ে বিবাদের জেরেই কি খুন, সেই সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পাশাপাশি, শিক্ষকের জিয়াগঞ্জের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে ডায়েরির একটি পাতা। সেখান থেকে পুলিশের অনুমান, শিক্ষকের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছিল। তাঁদের মাঝে কোনও তৃতীয় ব্যক্তি ছিলেন কিনা, তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ডায়েরির লেখা শিক্ষকের স্ত্রী বিউটিরই কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। তবে খুনের ঘটনায় যে পরিচিত কেউই জড়িত, সে সম্পর্কে নিশ্চিত তদন্তকারীরা।
বছর দুয়েক আগে জিয়াগঞ্জের লেবুবাগানে বাড়ি তৈরি করে পরিবার নিয়ে থাকতে শুরু করেন বন্ধুপ্রকাশ। সাগরদিঘির সাহাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকতা করতেন। বাড়িতে স্ত্রী বিউটি সন্তানকে নিয়ে একাই থাকতেন। বিউটি আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। সাগরদিঘির বারালায় তাঁদের আসল বাড়ি। মামার বাড়িতে থেকে বড় হওয়া। বছর আটেক আগে রামপুরহাটের বিউটির সঙ্গে বিয়ে হয়। জিয়াগঞ্জে এলাকার মানুষজনের সঙ্গে সে ভাবে মেলামেশা না-করলেও সকলের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতেন। তবে গ্রামের লোকজন প্রায় বাড়িতে আসত বলে জানা গিয়েছে।
দশমীর দিন সকালে বাজার করেন বন্ধুপ্রকাশ। ফোনে কথাও বলেন পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে। কিছুক্ষণ পরে প্রতিবেশীরা বাড়ি থেকে আর্ত চিৎকার শুনতে পান। এক যুবককে পালিয়ে যেতে দেখেন তাঁরা। বাড়িতে ঢুকে তাঁরা, খাটে পড়ে রয়েছে বন্ধুপ্রকাশের দেহ, অন্য ঘরে বিউটির দেহ, মেঝেতে পড়ে আর্যর দেহ। প্রত্যেকেরই গলা কাটা। বাড়ি থেকে একটি বড় রামদা পুলিশ উদ্ধার করে। গলায় যে ভাবে কোপ মারা হয়েছে, তাতে পুলিশের অনুমান, তীব্র রাগের কারণেই এই খুন। বিউটির মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। কল লিস্ট পরীক্ষা করা হচ্ছে। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক আত্মীয়কে আটক করেছে। যে ভাবে খুন হয়েছে, তাতে কোনও বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
Be the first to comment