ঠিক যেন কোনও ক্রাইম থ্রিলারের প্লট। গয়না, দামী জামাকাপড় হাতানোর জন্য অন্তঃসত্ত্বা প্রতিবেশীকে খুনের নিখুঁত ছক কষেছিল দম্পতি। কাজও হয় হিসেব মতোই। কিন্তু, শেষরক্ষা হল না। পুলিশের জালে ধরা পড়ল দু’জনেই। তবে, হত্যার পরিকল্পনা এবং পদ্ধতি দেখে শিউড়ে উঠেছেন দুঁদে পুলিশ অফিসারেরাও। লোভ যে কত মারাত্মক হতে পারে গ্রেটার নয়ডার এই খুনের ঘটনা সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
ধৃত দম্পতির নাম সৌরভ দিবাকর এবং রিতু। গ্রেটার নয়ডার বিসরাখের একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন তাঁরা। গৌতম বুদ্ধ নগর থানার পুলিশের শীর্ষ আধিকারিক অজয় পাল শর্মা জানিয়েছেন, খুন হওয়া মহিলার নাম মালা। তিনিও থাকতেন ওই একই বাড়িতে। ঘটনাটি ঘটে গত শুক্রবার।
মালার বিয়ে হয়েছে বেশ কয়েকমাস আগে। তাঁর স্বামী কর্মসূত্রে বাইরে ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার মালা তাঁর বাড়ির একটি অনুষ্ঠানে নিজেদের আত্মীয়দের নিমন্ত্রণ করেন। সেখানে উপস্থিত ছিল সৌরভ এবং রিতুও। নিজের দামী গয়না, জাপাকাপড় সবাইকে দেখাতে শুরু করেন মালা। এই জিনিসগুলি ছিল তাঁর স্যুটকেসের মধ্যে। সেখান থেকে বার করেই সবাই দেখাচ্ছিলেন তিনি। সে সব দেখে দু’চোখে লোভের ঝিলিক খেলে যায় সৌরভ ও রিতুর। কিন্তু, চুপচাপ মুখে হাসি নিয়েই তারা সে দিন নিজের ঘরে ফিরে আসে।
পুলিশকে ধৃতেরা জানিয়েছে, রাতে নিজের ঘরে বসেই সেই সব গয়না, জামাকাপড় হাতানোর পরিকল্পনা শুরু করে তারা। হত্যার নিখুঁত ছক বানানোও হয়। সেই মতো পরদিন, অর্থাৎ শুক্রবার মালাকে নিজের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে আনে সৌরভ ও রিতু। সেখানেই প্রথমে শ্বাসরোধ করে মালাকে খুন করে তারা, পরে মালার ঘরে গিয়ে তাঁর স্যুটকেস থেকে গয়না, জামাকাপড় বার করে নিয়ে সেখানেই মৃতদেহ ভরে দেয়।
এসএসপি অজয় পাল শর্মার কথায়, দেহ বাক্সবন্দী করে ওই দম্পতি গাজিয়াবাদ চলে যায়। সেখানে রিতু তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে ওঠে। আর সৌরভ বাক্সটি নিয়ে ইন্দিরাপুরমের রাস্তার ধারে ছুড়ে ফেলে দেয়। ঘটনার পরদিনই থানায় নিখোঁজ ডায়রি করে মালার পরিবারের লোকজন। তদন্তে নেমে পুলিশ ইন্দিরাপুরমের রাস্তা থেকে বাক্সবন্দী দেহ খুঁজে পায়। মালার বাড়ির লোকের দেওয়া বর্ণনার সঙ্গে দেহের সাদৃশ্য পেয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয় বাক্সের দেহটি মালার। পরে, দেহ সনাক্ত করে মালার পরিবারের লোকজন। সেই সঙ্গেই পুলিশ জানতে পারে, প্রতিবেশী দম্পতি শুক্রবার রাত থেকে বাড়ি ফেরেনি। সৌরভ ও রিতুকে গাজিয়াবাদ থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জেরা অপরাধের কথা স্বীকারও করেছে তারা।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২, ২০১, ৩১৬ এবং ৩৯৪ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
Be the first to comment