চিরন্তন ব্যানার্জি :- নবান্নের আপত্তি উড়িয়ে ফের জল ছাড়ার প্রক্রিয়া শুরু করলো ডিভিসি। নতুন করে আরও এক লক্ষ কিউসেকের বেশি জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিভিসি।
রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না করেই ডিভিসি জল ছাড়ছে বলে শনিবার নবান্ন থেকে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। এভাবে না জানিয়ে জল ছাড়ার ফলে জেলায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কাও প্রকাশ করা হয়েছিল। তবে নবান্নের ওই আপত্তি প্রকাশের পর ২৪ ঘণ্টাও পেরাল না। নতুন করে আরও ১.২০ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়ার কাজ শুরু করল ডিভিসি। রবিবার সকাল থেকে দফায় দফায় জল ছাড়াও হচ্ছে। ঝাড়খণ্ডের বাঁধ থেকেও ছাড়া হয়েছে বেশ খানিকটা জল।
রবিবার সকালে মাইথন জলাধার থেকে ছ’হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য এই পরিমাণ জল প্রতি দিনই ছাড়া হয়। ফলে এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু পাঞ্চেত জলাধার থেকে ছাড়া জলের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। রবিবার ওই জলাধার থেকে ১ লক্ষ ১৪ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। ফলে মাইথন এবং পাঞ্চেত মিলিয়ে মোট ছাড়া জলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ২০ হাজার কিউসেক। রবিবার সকাল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত এই জল ছাড়া হয়েছে বলে খবর। মাইথন এবং পাঞ্চেত থেকে ছাড়া জল দামোদরের দুর্গাপুর ব্যারাজে এসে জমা হয়। জলের চাপ বেড়ে যাওয়ায় রবিবার সেখান থেকেও জল ছাড়া শুরু হয়েছে। সকাল ৯টা পর্যন্ত দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে ৯২ হাজার ৬৭৫ কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাজ্য সরকারের সেচ দফতরের ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জয় মজুমদার। বেলা বাড়লে জল ছাড়ার পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও পশ্চিম বর্ধমানে বৃষ্টি কিছুটা কমেছে। ফলে নতুন করে দামোদরের ব্যারাজে চাপ পড়ার সম্ভাবনা কম। বৃষ্টি না হলে আর হয়তো জল ছাড়া হবে না দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে। তবে আবার বৃষ্টি শুরু হলে আরও জল ছাড়তে হতে পারে। যা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
অন্যদিকে, ডিভিসি-র এক আধিকারিকের সাথে আমরা কথা বলে জানতে পারি, ঝাড়খণ্ডের উপরে নিম্নচাপ অবস্থান করছে। তার প্রভাবে ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি চলছে। সেখানকার তেনুঘাট জলাধার থেকে শনিবার দেড় লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছিল। রবিবার সকালেও জল ছেড়েছে তেনুঘাট। এই জল পাঞ্চেত জলাধারে এসে পৌঁছেছে। সেই কারণেই রবিবার পাঞ্চেত থেকে বাড়তি জল ছাড়তে হয়েছে।
উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে গত কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাতে দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সবকটি নদীর জলস্তরই বেড়েছিল। গত দুদিন ডিভিসির ছাড়া জলে নদীর জলস্তর প্রায় বিপদ সীমার কাছাকাছি বয়ছিল। ইতিমধ্যে একাধিক এলাকা জলমগ্নও হয়ে পড়েছে। বিঘের পর বিঘের জমির ফসল ইতিমধ্যে জলের তলায় চলে গিয়েছে। এবার ডিভিসি নতুন করে জল ছাড়ার ফলে বাঁকুড়া, দুই মে্দিনীপুর, ঝাড়গর্মা, হাওড়া-সহ একাধিক জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ডিভিসির জল ছাড়ার প্রক্রিয়া নিয়ে শনিবার বিকেলে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে নবান্ন। রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ডিভিসি। যা রাজ্যের মানুষের পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে। তবে রাজ্যবাসীকে এখনই আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে নবান্ন।
Be the first to comment