চিরন্তন ব্যানার্জি :- রবিবার দিনভর অশান্তির পর সোমবার সকাল থেকেই বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রেণের বাইরে চলে যেতে থাকে। কিন্তু তা কিছুতেই মেনে নিতে পারেন নি হাসিনা। কোন মতেই দেশও ছাড়তে চান নি তিনি। সূত্রের খবর, উলটে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করে প্রধানমন্ত্রীর পদ ধরে রাখতে চেয়েছিলেন তিনি।
বাংলাদেশের প্রথমসারির সংবাদ মাধ্যমে ‘প্রথম আলো’ সূত্রের খবর, পদত্যাগের পরিকল্পনা দূরের কথা, সোমবার সকাল ১০টা থেকে শেখ হাসিনা উল্টে চাপ দিতে শুরু করেছিলেন রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের। খানিক ধমকের দিয়ে জানতেও চেয়েছিলো কেন পুলিশ অথবা সেনা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না।
পরিবারের সদস্যরা অনেক বোঝানোর পরে, আমেরিকা থেকে তাঁর ছেলে জয় ফোন করে অনেকক্ষণ কথা বলার পরে, শেষমেশ পদত্যাগে রাজি হন শেখ হাসিনা। এর পরে সেনাবাহিনীর তরফে মাত্র ৪৫ মিনিট সময় বেঁধে দেওয়া হয় হাসিনাকে। তার মধ্যেই পদত্যাগ করে সেনা হেলিকপ্টারে করে বোন রেহানার সঙ্গে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। চলে আসেন ভারতে। আপাতত নয়াদিল্লির সেফ হাউসে আছেন তিনি।
উল্লেখ্য, রবিবারের আগে থেকেই হাসিনার পরিবারের সদস্যরা বোঝানোর চেষ্টা করেন, পদত্যাগ করাই শ্রেয়। তবে নিজের সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন হাসিনা। রবিবার পরিস্থিতি হাতের বাইরে যেতে শুরু করলে, সেনার হাতে শাসনভার তুলে দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়। তখনও তিনি তা মানতে চাননি কোনও ভাবেই। বরং সোমবার সকালে থেকে আরও বেশি কড়া হাতে পরিস্থিতি দমন করতে চান হাসিনা। আরও কড়া করতে বলেন কার্ফু। তবে ভোর থেকে কড়া কার্ফু জারি করা হলেও, সকাল ৯টা বাজতেই সারা দেশের নানা জায়গায় আন্দোলনকারীরা কার্ফু ভেঙে পথে নামতে শুরু করেন। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে জমায়েতের আকার বড় হতে থাকে।
সকাল ১০:৩০ নাগাদ দেশের তিন বাহিনীর প্রধান ও পুলিশের শীর্ষকর্তাকে গণভবনে ডেকে পাঠান শেখ হাসিনা। ক্ষোভ প্রকাশ করেন, কেন নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না, কেন তাঁরা আরও কঠোর হচ্ছে না। সূত্রের খবর, এক পর্যায়ে হাসিনা একথাও বলেন, তিনি বিশ্বাস করে এই কর্মকর্তাদের দেশের নানা বাহিনীর শীর্ষ পদে বসিয়েছেন। তবে আইজিপি জানিয়ে দেন, পরিস্থিতি যে পর্যায়ে গেছে, তাতে পুলিশের পক্ষেও আর এই কঠোর অবস্থান ধরে রাখা সম্ভব নয়।
সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে সকলেই শেখ হাসিনাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, বলপ্রয়োগ করে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না। কিন্তু শেখ হাসিনা সেটা মানতে চাননি। তখন অফিসাররা আলাদা করে হাসিনার বোন, শেখ রেহানার সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনা করেন। অনুরোধ করেন, তিনি যেন দিদিকে বোঝান। সেই মতো রেহানাও শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করেন। কিন্তু তখনও তিনি ক্ষমতা ধরে রাখতে অনড় থাকেন। শেষমেশ বাহিনীর এক শীর্ষকর্তা ফোন করে কথা বলেন আমেরিকায়, হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে। এর পরে জয় তাঁর মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। শেষমেশ শেখ হাসিনা পদত্যাগে রাজি হন। তার পরেই তাঁকে সময় বেঁধে দেয় সেনাবাহিনী। শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে একটি ভাষণ রেকর্ড করতে চাইলেও সে সময় ছিল না। কারণ ততক্ষণে বিপুল সংখ্যক ছাত্র-জনতা শাহবাগ ও উত্তরা থেকে গণভবনের দিকে ধেয়ে আসতে থাকে। অনুমান করা হয়, ৪৫ মিনিটের মধ্যেই তারা ঢুকে পড়বে গণভবনে। তার মধ্যে যদি শেখ হাসিনা বেরোতে না পারেন গণভবন থেকে, তাহলে চরম বিপদ হয়ে যেতে পারে। সে জন্যই শেখ হাসিনাকে ভাষণ রেকর্ডের সময় না দিয়ে ৪৫ মিনিট সময় বেঁধে দেয় সেনা।
এরপরেই, অতি দ্রুত বোনের সঙ্গে তেজগাঁওয়ের পুরোনো বিমানবন্দরের হেলিপ্যাডে পৌঁছন শেখ হাসিনা। তারপরে বঙ্গভবনে গিয়ে পদত্যাগ করেই বেলা আড়াইটার দিকে সেনা হেলিকপ্টারে করে ভারতে চলে আসেন শেখ হাসিনা।
Be the first to comment