তৃণমূলের টিকিট টাকা দিয়ে বিক্রি হয় না। দলের কর্মীরাই এখানে নেতা। আলিপুরদুয়ারের সভা থেকে এই বার্তাই দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেসুরো তৃণমূল কর্মী-নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যাঁরা বেশি দুর্নীতি করেছেন, তাঁরাই পালিয়েছেন। যাঁরা লোভী ও ভোগী তাঁদের জন্য রাস্তা খোলা রয়েছে। এ দিন বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকারকেও একহাত নেন তৃণমূল নেত্রী। পাশাপাশি তুলে ধরেন রাজ্য সরকারের নানা উন্নয়ন প্রকল্প।
বুধবারও আলিপুরদুয়ারের সভায় শুরুতেই জনজাতিদের মন ছোঁয়ার চেষ্টা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চা বাগানের শ্রমিক, বোড়ো, রাজবংশী, টোটো, কামতাপুরী, মতুয়া, আদিবাসী-সহ নানা ধর্মের মানুষকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য শুরু করেন তিনি। তবে শুরু থেকেই তাঁর নিশানায় ছিলেন সদ্য তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া নেতারা। মমতা বলেন, ”যারা লোভী ও ভোগী তাঁরা বিজেপিতে চলে গিয়েছেন। এ রকম যাঁরা আছেন, তাঁদের জন্য রাস্তা খোলা রয়েছে। তৃণমূল মা মাটি মানুষের দল, এখানে লোভের জায়গা নেই। বিজেপি ওয়াশিং মেশিন, সব কালো ওখানে গিয়ে সাদা হয়ে যায়।”
দলের কর্মীদের উদ্দেশে স্পষ্ট ভাষায় নেত্রীর বার্তা, ”তৃণমূলের টিকিট টাকা দিয়ে বিক্রি হয় না। টিকিট পেতে কোনও লবিও করতে হয় না। যিনি ভালো কাজ করবেন, দল তাঁকে খুঁজে নেবে। তৃণমূলের নেতারা দলের প্রকৃত নেতা নন, বুথ কর্মীরা দলের নেতা। তাঁরাই নেতাদের পরিচালিত করেন। তাঁরাই মানুষের কাছে পৌঁছন। নেতাদের বড় ছাতা তৃণমূলের কর্মীরাই।”
এ দিন বিজেপিকে তুলোধোনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভোটের আগে নানা কথা শোনা যাচ্ছে বিজেপির মুখে। বাজেটে ওরা বলেছে, রাজ্যে ৬৭৫ কিলোমিটার রাস্তা হবে। আমরা তো অনেক আগেই তার থেকে অনেক বেশি রাস্তা রাজ্যে করে দিয়েছি। ক্ষমতায় এসে ওরা কোনও প্রতিশ্রুতিই রক্ষা করেনি। এখান থেকে জিতে গিয়ে পালিয়েছেন সাংসদরা। পেট্রল-ডিজেলের উপর সেস বসানো হয়েছে। জনবিরোধী বাজেট করেছে। বিজেপি জনতার দল নয়, জমিদারের দল। ওদের সময়ে দেশে ৪০ শতাংশ বেকারত্ব বেড়েছে। আর একমাত্র এই রাজ্যে আমরা গরিবি কমিয়েছি।
বাজেটে বেসরকারিকরণের প্রসঙ্গ টেনে তৃণমূল নেত্রীর আহ্বান, ওরা সব বেচে দেবে। বিজেপিকে বিদায় দাও। ফিরিয়ে দাও, ফিরিয়ে দাও, আমার মাতৃভূমি ফিরিয়ে দাও, আমার দেশ ফিরিয়ে দাও।
সরকারের নানা উন্নয়ন প্রকল্পের কথা মনে করিয়ে দিয়ে মমতা বলেন, ”ওরা বলছে সোনার বাংলা গড়বে। সোনা চাই না, আমাদের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান চাই। সব ক্ষেত্রের মানুষের জন্য উন্নয়নের ব্যবস্থা করেছে আমাদের সরকার। তৃণমূলকে ক্ষমতায় আনলে বিনামূল্য রেশন পাবেন, স্বাস্থ্যসাথীতে 5 লাখ টাকা পর্যন্ত চিকিত্সা করাতে পারবেন, এ ছাড়াও পাবেন কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, যুবশ্রী আরও অনেক কিছু। তাই ওরা টাকা দিতে এলে তা নিয়ে খেয়ে নিন, আর ভোটটা তৃণমূলকে দিন। সাগর থেকে পাহাড়, নন্দীগ্রাম থেকে ঝাড়গ্রাম-সর্বত্রই তৃণমূল জিতবে। পদ্মফুলে ভোট দেবেন না, ছোট ফুলই ভালো।” তৃণমূলের আমলে পাহাড় ও তরাই-ডুয়ার্সে শান্তি এসেছে বলেও দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী।
আদিবাসীদের জমি যাতে কেউ কেড়ে নিতে না-পারে সে জন্য তাঁর সরকার আইন তৈরি করেছে বলে জানান মমতা। তিনি জানিয়েছেন, আগামী ৭-৮ দিনের মধ্যেই নির্বাচনের দিন ঘোষণা হবে। ভোটের পর জনজাতিদের জন্য বাকি কাজ সম্পূর্ণ হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।তৃণমূলের টিকিট টাকা দিয়ে বিক্রি হয় না, কর্মীরাই দলের নেতা: মমতা
Be the first to comment