নারদ কাণ্ডে রাজ্যের তিন বিধায়ক ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র ও প্রাক্তন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারের প্রতিবাদে লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে গোটা বাংলা উত্তাল। করোনা বিধি শিঁকেয় তুলে নিজাম প্যালেসের সামনে তৃণমূল কর্মীরা ব্যাপক বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। ব্যারিকেড ভেঙে ঢোকার চেষ্টা, কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে তৃণমূল কর্মীদের ব্যাপক ধস্তাধস্তি, রাস্তায় শুয়ে বিক্ষোভ আর দফতরের ভিতরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবস্থান- গোটা আবহে এখন উত্তাপে ফুটছে নিজাম প্যালেস চত্বর।
অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। আজই চার জনকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে পেশ করা হবে। সেক্ষেত্রে দফতরের পিছনের গেট দিয়ে বার করা হতে পারে তাঁদের। নগর দায়রা আদালতের বাইরেও মোতায়েন রয়েছে প্রচুর পুলিশ। সোমবার সকালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজাম প্যালেস পৌঁছতেই বাইরে ভিড় জমান তৃণমূল কর্মীরা। সময় যত এগোতে থাকে, চড়তে থাকে উত্তাপ। সিআরপিএফ জওয়ানদের ধাক্কা মেরে, ব্যারিকেড ভেঙে সিবিআই দফতরে ঢোকার চেষ্টা করেন তৃণমূল কর্মীরা। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান মুরলিধর শর্মা মাইকিং করে ভিড় সরানোর চেষ্টা করেন। কাজ করে না তা। শুরু হয় প্রবল ধাক্কাধাক্কি। পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে।
এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে নিজাম প্যালেসে অবস্থান বিক্ষোভে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দফতরের ১৪ তলায় সিবিআই আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সহকর্মীদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে তাঁর বক্তব্য, যদি ফিরহাদ-সুব্রত-মদনকে গ্রেফতার করা হয়, তাহলে গ্রেফতার করতে হবে তাঁকেও!
বিক্ষোভের আঁচ আজ গোটা বাংলায়। ২ মন্ত্রী ও ১ বিধায়ককে গ্রেফতারের প্রতিবাদে জেলায় জেলায় শুরু হয়েছে তৃণমূল কর্মীদের বিক্ষোভ। কোথাও টায়ার জ্বালিয়ে, কোথাও পথ অবরোধ করে, কোথাও আবার রাস্তায় শুয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। বিক্ষোভকারীরা প্রশ্ন তোলেন, “শুভেন্দু, মুকুলকে কেন গ্রেফতার করা হল না? যদি ওঁদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করা না হয়, তাহলে গোটা বাংলায় আগুন জ্বলবে।” তৃণমূলের তরফেও প্রশ্ন তোলা হয় একই। কারণ যে কারণ দর্শিয়ে তৃণমূলের তিন বিধায়ক ও প্রাক্তন বিজেপি নেতাকে গ্রেফতার করা হল, সেই কারণে তো অভিযুক্ত মুকুল রায় ও শুভেন্দু অধিকারীও কারণ তাঁদেরকে দেখা গিয়েছিল সেই ফুটেজে।
অন্যদিকে, এই গ্রেফতারি অবৈধ করে দাবি করেছে তৃণমূল। যদিও তৃণমূল দাবি করছে, বিধানসভার স্পিকারের অনুমতি না নিয়েও গ্রেফতার করা হয়েছে এই তিন বিধায়ককে। রাজ্যপাল যেদিন অনুমতি দিয়েছেন, সেদিনও স্পিকার ছিলেন বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। এই নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টকে ইতিমধ্যেই লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। প্রতিক্রিয়াতে এই বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁর কথায়, “আমরা হাইকোর্টকে লিখিত জানিয়েছি, আমাদের কাছ থেকে ওরা কোনও অনুমোদন চায়নি, যোগাযোগও করেনি। রাজ্যপাল যেদিন অনুমোদন দিলেন, সেদিন আমি বিধানসভায় অধ্যক্ষ পদে বহাল ছিলাম। যখন হাইকোর্টের একটা নির্দেশ রয়েছে, সেক্ষেত্রে বিধানসভাকে বাইপাস করে রাজ্যপালকে কীভাবে এটাকে অনুমোদন দিলেন! আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি।” এই গ্রেফতারি অবৈধ বলে দাবি করেছেন স্পিকার।
Be the first to comment