দিলীপ কুমারের মৃত্যুতে ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে তৈরি হল এক অশেষ শূন্যতা। প্রবীণ অভিনেতার মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ বলিউড। আজ সকাল ৮টা নাগাদ মুম্বইয়ে হিন্দুজা হাসপাতালে মৃত্যু হল দিলীপ কুমারের। দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন ৯৮ বছর বয়সী এই তারকা।
প্রবীণ অভিনেতার মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি শোকবার্তায় লিখেছেন, কিংবদন্তীপ্রতিম চলচ্চিত্র-ব্যক্তিত্ব দিলীপ কুমার (মহম্মদ ইউসুফ খান)-এর প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি আজ মুম্বইয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর। তাঁর মৃত্যুতে চলচ্চিত্র জগতের অপূরণীয় ক্ষতি হল। আমি দিলীপ কুমারের সহধর্মিণী প্রখ্যাত অভিনেত্রী সায়রা বানু, পরিবার-পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি ।
(দেখুন শোকবার্তা)
পশ্চিমবঙ্গ সরকার
তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ
নবান্ন
৩২৫, শরৎ চ্যাটার্জি রোড
হাওড়া- ৭১১১০২
স্মারক সংখ্যা: ৮২/আইসিএ/এনবি
তরিখ: ৭/৭/২০২১
মুখ্যমন্ত্রীর শোকবার্তা
কিংবদন্তীপ্রতিম চলচ্চিত্র-ব্যক্তিত্ব দিলীপ কুমার (মহম্মদ ইউসুফ খান)-এর প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি আজ মুম্বইয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর।
দিলীপ কুমার প্রায় পাঁচ দশক ধরে ৬৫টিরও বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি: মুঘল -এ,- আজম, গঙ্গা-যমুনা, দেবদাস, শবনম, মুসাফির, মধুমতী, সাগিনা মাহাতো, ক্রান্তি ইত্যাদি।
দিলীপ কুমার ২০০০ সালে রাজ্যসভার সাংসদ মনোনীত হন। তিনি মুম্বই এর শেরিফ পদের দায়িত্বও পালন করেন। বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন।
দিলীপ কুমার পদ্মবিভূষণ, পদ্মভূষণ, দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার, ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড সহ অজস্র সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।
তাঁর মৃত্যুতে চলচ্চিত্র জগতের অপূরণীয় ক্ষতি হল।
আমি দিলীপ কুমারের সহধর্মিণী প্রখ্যাত অভিনেত্রী সায়রা বানু, পরিবার-পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি ।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
১৯৬৬ সালে ২২ বছরের ছোট সায়রা বানুকে বিয়ে করেছিলেন দিলীপ কুমার। দেখতে দেখতে তাঁদের দাম্পত্য সম্পর্ক ৫৪ বছর অতিক্রম করেছে। দীর্ঘ পাঁচ দশকের সঙ্গীকে একা রেখে না-ফেরার দেশে চলে গেলেন দিলীপ কুমার, এই দম্পতির কোনও সন্তান নেই। পরস্পরকে আগলে রাখতেন দুজনে, সম্পর্কে চড়াই উতরাই এসেছে ঠিকই- সব বাধা বিপত্তি পেরিয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দিলীপ কুমারকে আগলে রেখেছিলেন সায়রা বানু। স্বামীর মৃত্যুতে স্বভাবতই শোকস্তব্ধ সায়রা।
‘ভগবান আমার বেঁচে থাকার কারণটাই কেড়ে নিল… সাহাবকে ছাড়া তো আমার জীবন অর্থহীন, আমি কিছু ভাবতেই পারছি না… দয়া করে সকলে প্রার্থনা করুন’, এদিন সকালে চিকিত্সদের কাছ থেকে দিলীপ কুমারের মৃত্যু সংবাদ শোনার পর এটাই ছিল সায়রা বানুর প্রথম প্রতিক্রিয়া। ডাঃ জালিল পারেকর সর্ব প্রথম এই দুঃসংবাদ জানান দিলীপ জায়াকে।‘ভগবান আমার বেঁচে থাকার কারণটাই কেড়ে নিল…’ নিজের মনে মনে এই লাইনই বারবার উচ্চারণ করে চলেছিলেন দিলীপ-জায়া।
উল্লেখ্য, দু-দিন আগেই সাংবাদিকদের উদ্দেশে হাত নেড়ে সায়রা বানু জানিয়েছিলেন ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন অভিনেতা, শীঘ্রই বাড়ি ফিরে যাবেন- কে জানত হিন্দুজা হাসপাতালের বাইরে দাঁড় করানো মেরুণ রঙা গাড়িটা করে আর বাড়ি ফেরা হবে না দিলীপ কুমারের। জীবনের ওপারে নয়া দৌড়ে শামিল হবেন তিনি।
ঝুক গয়া আসমান’ ছবির সেটে সায়রা বানুকে প্রোপোজ করেন দিলীপ কুমার। তাঁর আগে থেকেই সায়রা পাগল ছিলেন দিলীপ কুমারের প্রেমে। তাই তৎক্ষণাত হ্যাঁ করে দিয়েছিলেন। সায়রা বানুর সঙ্গে বিয়ের ১৬ বছর সংসার করার পর তাঁকে ত্যাগ করে দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন দিলীপ কুমার। আসমা রেহমানকে বিয়ে (১৯৮১) করা যে ভুল ছিল তা পরবর্তী সময়ে নিজেই স্বীকার করে নেন, ফিরে গিয়েছিলেন প্রথম স্ত্রীর কাছে।
দিলীপ কুমারকে শেষ বয়সে যেভাবে সেবা-যত্ন করেছেন সায়রা বানু, তার প্রশংসা করে সকলেই। কিন্তু সায়রা বানুর কথায়, দায়িত্ব ভেবে নয় দিলীপ কুমারকে ভালোবাসেন বলেই এভাবেই আগলে রেখেছেন। অবশেষে ছিন্ন হল দিলীপ-সায়রার ভালোবাসার বাঁধন, আজীবনের মতো সায়রা বানুকে একে রেখে চলে গেলেন দিলীপ সাহাব।
Be the first to comment