এবছরের ২১ জুলাই একেবারে অন্যরকম। পশ্চিমবঙ্গের গণ্ডি পেরিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে সরাসরি প্রবেশ করল তৃণমূল। বিজেপি বিরোধী ফ্রন্ট গড়ার ডাক দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলা জয় করে এবার দিল্লি চলোর ডাক দিলেন নেত্রী। ২৮ তম বর্ষের ২১ জুলাইয়ে বাংলাকে ছাপিয়ে দেশের মানুষকে বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময় এসেছে।’ তিন ভাষায় বক্তব্য রাখলেন তিনি। ভার্চুয়াল ভাষণের মাধ্যমেই পৌঁছে গেলেন দিল্লি থেকে ত্রিপুরা। বক্তব্যে তুলে আনলেন পেগাসাস থেকে শুরু করে কোভিড মোকাবিলার প্রসঙ্গ।
এদিন ২১-এর মঞ্চে বক্তব্যের শুরু থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায় ছিল মোদী সরকার বিরোধী সুর। এদিন শুরু থেকেই দিল্লির রাজনীতির প্রসঙ্গ উঠে আসে মমতার ভাষণে। উঠে আসে পেগাসাস বিতর্ক। তিনি বলেন, ‘পেগাসাস ডেঞ্জারাস! পেগাসাস পেগাসাস, নরেন্দ্র মোদীর নাভিশ্বাস।’ বিস্ফোরক মন্তব্য করে মমতা এদিন বলেন, ‘আমার ফোনও ট্যাপ করা হচ্ছে। আমার ফোনের ক্যামেরা ঢেকে রাখতে হয়েছে। কারও সঙ্গে কথা বলতে পারি না। অভিষেক আর পিকের ফোন ট্যাপ করা হচ্ছে। তাঁদের সঙ্গে আমি কথা বলি তাই আমার ফোনও ট্যাপ হয়।’ শুধু তাই নয়, পেগাসার ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্ট স্বতপ্রণোদিত মামলার আর্জি জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
একইসঙ্গে করোনা ইস্যুতেও এদিন মোদী সরকারকে বিঁধেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘কোভিড মোকাবিলায় মনুমেন্টাল ফেলিউর হয়েছে এই সরকার।’ গঙ্গায় কোভিড মৃতদেহ ভেসে আসার দাবি করে ফের একবার সোচ্চার হন মমতা। তিনি তুলে ধরেন কীভাবে মোদী সরকারের গাফিলতিতে সংক্রমণ ছড়িয়েছে এবং কোভিড মৃত্যু বেড়েছে। পাশাপাশি, বিজেপি-কেও একহাত নেন নেত্রী। তিনি বলেন, ‘গুলি আর গালির রাজনীতি করে এই দল। আমার তো মনে হয় বিজেপি একটি হাই লোডেড ভাইরাস।’
তবে এদিন বারবার বিজেপি বিরোধী ফ্রন্ট গড়ে লড়াইয়ের ইঙ্গিত মিলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণে। মোদী বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে উদ্দেশ্য করেই যেন মমতা এদিন বলেন, ‘আড়াই বছর বাকি। এখন থেকেই জোট বেঁধে আলো দেখাতে হবে। এবার রাজ্যে রাজ্যে খেলা হবে।’
বারবার মমতা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো নষ্ট করছে বিজেপি।’ তিনি বলেন, ‘মোদীজী আপনাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করছি না। আমাদের রাজনীতিতে একটা নীতি আছে। কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে ব্যবহার করছেন আপনি , অমিত শাহ। যতটা নীচে নামা সম্ভব আপনি নেমেছেন।’ এছাড়াও তাঁর বক্তব্যে ছিল প্রতিশ্রুতিও। তিনি বলেন, ‘ক্ষমতায় এলে সকলকে বিনামূল্যে রেশন ও চিকিৎসা দেওয়া হবে।’
এদিন বক্তব্যের একদম শেষ প্রান্তে এসে দলীয় কর্মীদের প্রতি কড়া বার্তা দিতে শোনা গেল নেত্রীকে। তিনি বলেন, ‘নতুনদের স্বাগত জানান, পুরনোদের সম্মান বজায় রাখুন।’ এই বার্তা যে মূলত গোষ্ঠীকোন্দল রুখতে তা যেন এদিন স্পষ্ট করে দেন সুপ্রিমো।
Be the first to comment