জাগোবাংলার দৈনিক, মমতা লিখলেন ‘এবার শপথ চলো দিল্লি’, ‘এবার খেলা হবে দিল্লির মাঠে’ হুঁশিয়ারি অভিষেকের

Spread the love

পিয়ালী
‘জাগোবাংলা’। ২০২১-এর একুশে জুলাই দৈনিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল। বলা যায়, নতুন আঙ্গিকে নবরূপে জাগোবাংলার প্রকাশ। ‘জাগোবাংলা’ নামটার মধ্যেই আছে একটা সদর্থক দিক। বাংলা জেগে উঠুক। বাংলার মা-মাটি-মানুষ যেন জাগ্রত বিবেক। তাই সাপ্তাহিক জাগোবাংলা তার মূল কাণ্ডারি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছানুযায়ী দৈনিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল।

আধুনিকতম তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্য ডিজিটাল সংস্করণ যাকে বলা যেতে পারে ই-পেপার-এর মাধ্যমে শুধু বাংলা নয়, দেশে-বিদেশে প্রতিটি প্রান্তে পৌঁছে যাবে সঠিক সংবাদ এবং কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে সাতসকালে ঘুম থেকে জেগে উঠেই হাতে পাওয়া যাবে জাগোবাংলা। একুশের একুশে জুলাই শহিদ তর্পণ দিবসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে এই দৈনিক কাগজ প্রাণ পেল। জাগোবাংলাকে নিয়ে অনেক স্মৃতি আছে আমাদের মনে। ২০০৫ সালে জাগোবাংলা শুরু হয়। তখন রাজ্যে বামফ্রন্টের শাসন। তারই মধ্যে দিয়ে অনেক লড়াই করে স্ট্যান্ডে লাগানো হত সাপ্তাহিক জাগোবাংলা।

তবে পুজোর সময় জাগোবাংলার উৎসব সংখ্যা প্রকাশ খুব আনন্দের সঙ্গে পালিত হত। প্রথমে উত্তম মঞ্চে এই জাগোবাংলা উৎসব সংখ্যা প্রকাশের অনুষ্ঠান হত। উপস্থিত থাকতেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ডেরেক ও’ব্রায়েন, সৌগত রায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। আমার মনে আছে, যে উত্তম মঞ্চে কুইজ কনটেস্ট হত এই উৎসব সংখ্যা প্রকাশ উপলক্ষে। কুইজে সাংবাদিকরাও অংশগ্রহণ করতেন। কুইজ মাস্টার হিসেবে দেখা যেত সৌগত রায় ও ডেরেক ও’ব্রায়েন-কে। আমরা উত্তর দিয়ে সুন্দর সুন্দর পুরস্কারও পেতাম। জাগোবাংলার সঙ্গে ওতপ্রোতোভাবে জড়িত, তাঁর নাম পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

দৈনিক জাগোবাংলার প্রথম সংখ্যায় পার্থবাবু সেই স্মৃতিচারণও করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এ এক অন্যরকম অনুভূতি। সেই কবে ছোট্ট পদক্ষেপে সাপ্তাহিক জাগোবাংলা শুরু। আর আজ সেই কাগজ দৈনিক হচ্ছে। সম্ভবত ২০০৫ সালের মহালয়ার দিন প্রথম প্রকাশ ট্যাবলয়েড চেহারায়। ওটাই কাগজের জন্মদিন। নিউ আলিপুরে একটা অফিস থেকে আমি আর এখন প্রয়াত গৌতম বসু কাগজ করতাম। মনে পড়ছে, প্রথম সংখ্যায় ছিল ঠাকুর নৌকায় আসার ছবি। মমতার নিজের আঁকা।

এরপর একসময় কাগজ উঠে এল আমার বাড়িতে। ডিটিপিও ওখানে হত। আস্তে আস্তে কাগজ বড়ো হল। দু-পাতা রঙিন থেকে আরও পাতা বাড়ল। এক বর্ষার মহালয়ায় অঝোর বৃষ্টিতে যখন শহর ডুবে গেছে তখনও উত্তম মঞ্চে জাগোবাংলার উৎসব সংখ্যার উদ্বোধন থেমে থাকেনি।’
ট্যাবলয়েড আকারের ১৬ পাতার এই কাগজে খুব স্বাভাবিকভাবেই অর্ধেকেরও বেশি জায়গা জুড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা। বার্তা খুব স্পষ্ট ‘এবার শপথ চল দিল্লি’। ২০২১-এর ২১ জুলাই ২০২৪-এর লড়াইয়ের বার্তা দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জাগোবাংলায় তিনি লিখেছেন, একুশে জুলাই শহিদ তর্পণের দিন। এই দিনটায় আমার স্বপ্নের জাগোবাংলা সাপ্তাহিক থেকে দৈনিক হচ্ছে। এর থেকে ভালো অনুভূতি আর কি হতে পারে?

এবারের একুশে জুলাইও ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সবরকম কুৎসিত আক্রমণ, মিথ্যাচার, ষড়যন্ত্রের পরেও মানুষের বিপুল সমর্থনে আবার কাজ করার সুযোগ পেয়েছে মা-মাটি-মানুষ-এর সরকার। বিজেপির বহিরাগতরা এই পরাজয় হজম করতে পারছে না। তাই চলছে প্রতিহিংসাপরায়ণ চক্রান্ত, বৈষম্যমূলক আচরণ, বাংলার প্রতি বঞ্চনা, আরও নানা রকম আক্রমণ। আমি চিরকাল মনে করি, কর্মীরাই দলের আসল সম্পদ। তারাই আগলে রাখেন দলকে।

এবারের বিধানসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বিজেপি ডেইলি প্যাসেঞ্জার নেতাদের সবরকম আগ্রাসী আক্রমণ আর গদ্দারদের কুৎসার বিরুদ্ধে অসাধারণ লড়াই দিয়েছেন কর্মীরা। মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে রুখে দিয়েছেন এত বড় চক্রান্ত। আমরা জিতেছি মা-মাটি-মানুষের আশীর্বাদে। সামনে আরও বড় কাজ। এই বড় কাজ বলতে যে, চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের দিকে পাখির চোখ, তা বলাই বাহুল্য। তাঁর লেখার শেষ অংশে আছে লড়াই, সংগ্রামের, ইতিহাসের দলিল হয়ে আছে ‘জাগোবাংলা’। বাংলা জেগেছে। বাংলা আরও বেশি করে মাথা তুলছে।

দিল্লির প্রভাবশালীদের এত চেষ্টা সত্ত্বেও অশুভ শক্তিকে হারিয়ে দেয় বাংলা। শুভ শক্তিকে আশীর্বাদ করে। বাংলার এই জাগ্রত চেতনার সঙ্গেই এখন থেকে রোজ সকালে পথ চলবে জাগোবাংলা। আসুন মানুষের কাজ করার মধ্য দিয়েই দেশের আকাশে কালো মেঘ কাটিয়ে সোনালী রোদ্দুর ভরা আকাশ ফেরানোর শপথ নিই। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ‘দুর্ভেদ্য, দুর্গের মতো সংগঠন’ শীর্ষক লেখায় উল্লেখযোগ্য হল, এখন আমাদের কর্তব্য দ্বিমুখী।

প্রথমত মানবতাবিরোধী শক্তির হাত থেকে সুরক্ষিত রাখা। ভুল-ত্রুটি থাকলে তা সংশোধনের মাধ্যমে রাজ্য সরকারকে আরও শক্তিশালী করা। দলের সংগঠন আরও মজবুত করা।

দ্বিতীয়ত, দেশের মানুষের আশা পূরণ। দেশ বিজেপির বিকল্প চাইছে। সারা দেশেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে আস্থা, ভরসা, ভালোবাসা, কৌতূহল ক্রমশ বাড়ছে। বাংলার উন্নয়নের মডেল, সামাজিক কর্মসূচি চাইছে সারা দেশ।’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আরও লেখেন, এবার বিধানসভা নির্বাচনে ওরা এসে বাংলার মাঠে খেলে গেল। রেফারি-সহ খেলতে এল, গোহারা হেরে হয়ে ফিরেছে। তৈরি থাকুক, এবার খেলা হবে দিল্লির মাঠে। ২০২৪-সালের দিল্লিতে পরিবর্তনের ডাক দিয়ে খেলব আমরা। আর এই লড়াইতে সঙ্গী থাকবে জাগোবাংলা। কোনও বিভ্রান্তি নয়, আসল তথ্য জানতে এবং আসল বিশ্লেষণ অনুভব করতে এখন রোজ সকালে আপনার হাতের মুঠোয় জাগোবাংলা।’

একুশে জুলাই তদন্ত কমিশনের অন্যতম সাক্ষী কুণাল ঘোষ লিখেছেন, মাইতিদা রিভলবার বার না করলে সেদিন ওরা মমতাদিকে মেরেই দিত। তিনি লিখেছেন, মমতাদি ব্রেবোন রোডে পৌঁছোতেই মারাত্মক তাণ্ডব শুরু করে পুলিশ ও বামফ্রন্টের সশস্ত্র ক্যাডাররা।… ওরা ঘিরে ফেলেছিল দিদিকে। ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে গেল রাস্তার ধারে ফুটপাথের কোণে। তুমুল নিগ্রহ। দিলি লড়ে যাচ্ছেন কোনও মতে। সেই সময় দেখা গেল পুলিশ বন্দুক তুলছে মমতাদির দিকে। পাশ থেকে আওয়াজ, মার, মার। ঠিক সেই চরম মুহূর্তে রিভলবার বার করেছিলেন মাইতিদা। তিনিও পুলিশেরই কর্মী, সাংসদ হিসেবে মমতাদির তৎকালীন দেহরক্ষী। মাইতিদা রিভলবার তুলেছিলেন মারমুখী পুলিশের দিকে। হুঙ্কার দিয়ে বলেছিলেন, এবার আমি গুলি চালাতে বাধ্য হব। মাইতিদার সেই রুদ্রমূর্তিতে সেদিন কোনওক্রমে প্রাণে বেঁচেছিলেন প্রবল নিগ্রহে ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়া মমতাদি।’ জাগোবাংলার দৈনিক সংখ্যার স্লোগান একই আছে— ‘মা-মাটি-মানুষের পক্ষে সওয়াল’। রাজ্য, আমার বাংলা, স্টেথোস্কোপ, নানারকম, সম্পাদকীয়, মাঠে-ময়দানে, দিল্লি দরবার, দেশ-বিদেশ, নিজের পায়ে ইত্যাদি বিভাগ ছাড়াও ডোরিকের মতো ছোটো ছোটো বেশ কিছু ভালো খবর আছে এই কাগজে।
জাগোবাংলার নবরূপে প্রকাশের দিন আবার ফিরে যাচ্ছি, কিছুটা অতীত দিনে।

সেইসময় পুজো সংখ্যা বের করতেন প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সী। নাম ছিল ‘দক্ষিণীবার্তা’। খুব জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন হলে বিশেষ করে মধুসূদন মঞ্চে এটি প্রকাশ হত। ২০০৫-এ জাগোবাংলার উৎসব সংখ্যা প্রকাশের পর আমাদের সাংবাদিকদের সকলেরই নজর থাকত, এই পুজো সংখ্যায় কি কি আছে তা জানার জন্য। পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, নির্বেদ রায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বোপরি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখনীতে সমৃদ্ধ থাকত জাগোবাংলা। এই জাগোবাংলা উৎসব সংখ্যায় ব্যাক কভারে ছবি থাকত একুশে জুলাইয়ের। ভিক্টোরিয়া হাউস থেকে ধর্মতলার চারপাশে যেদিকে চোখ যায়, শুধু কালো মাথার ভিড়। কোভিড পরিস্থিতিতে একুশে জুলাই গতবারের মতো এবার ভার্চুয়ালি ভাষণ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিশ্রুতি দিলেন, শীতকালে যদি করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে, তাহলে ব্রিগেডে হবে বিশাল জনসভা। সেখানে আমন্ত্রিত থাকবেন সোনিয়া গান্ধি থেকে শারদ পাওয়ার, বিজেপি বিরোধী দলগুলির নেতৃত্ব।

বর্তমান সারা বিশ্ব অতিমারির আক্রমণে জর্জরিত। তাই আমাদের সকলের শপথ নেওয়া উচিত, এই মারণ ব্যাধি থেকে কিভাবে মুক্ত হওয়া যায়। তাই জাগোবাংলার মতো সদর্থক নামের একটি কাগজ এই অতিমাতি পরিস্থিতি মানুষের মনের অন্ধকার দূর করে আশার আলো জাগাবে, সেটাই আমাদের কাম্য। সামনে পুজো। আমরা অপেক্ষায় থাকব আরও একটি সুন্দর জাগোবাংলা পুজো সংখ্যার জন্য। পরিশেষে বলি, জাগো দুর্গা, জাগো দশপ্রহরণধারিণী, অভয়া শক্তি বলপ্রদায়িনী, মাগো জাগো।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*