ওবেসিটি ও তার সমাধান : জানাচ্ছেন সোনালী ঘোষ

Spread the love

ওবেসিটি সমসাময়িককালে আধুনিক জীবনে অতি পরিচিত নাম। অবশ্য শুধু এখন কেন, বহু আগে থেকেই ওবেসিটি এক অন্যতম শারীরিক রোগ বলে গণ্য হত। তখনকার দিনে এ ব্যাপারে সচেতনতার তত চল ছিল না। ভাবাই হত যে, বিয়ের পর মেয়েরা একটু মোটা হবে। সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর শারীরিক স্থূলতা ছিল যেন স্বাভাবিক। কিন্তু কালের গতিপথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মানুষ যখন নিজের সৌন্দর্য কিম্বা স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হল, তখন সে স্থূলতা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় খুঁজতে লাগল। শুধু অভিনেতা-অভিনেত্রী, মডেল বা এয়ার হোস্টেসই নয়, চাকুরিজীবী থেকে শুরু করে গৃহবধূ সকলেই এখন নিজের চেহারা সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন। কিন্তু ওবেসিটি ব্যাপারটা কি? কেনই বা এটা হয়?
আমরা মুখোমুখি হয়েছিলাম এই প্রশ্ন নিয়ে ডায়াটেসিয়ান ও নিউট্রিশানিস্ট সোনালী ঘোষের। সোনালী দেবীর সোজাসাপ্টা কথা, প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর। অর্থাৎ রোগ হওয়ার আগেই সচেতন হতে হবে নিজেদের। শিশু বয়স থেকেই যাতে মোটা না হয়ে যায়, সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। সোনালী দেবী বললেন, আমাদের কাছে যে সমস্ত পেশেন্ট আসে, তাদের মধ্যে লক্ষণীয়ভাবে দেখা যায় চাইল্ড ওবেসিটি।
কিন্তু এটা হয় কেন?
এখনকার বাচ্চারা বার্গার, পিজজা, মোমো, ম্যাগিতে এতটাই অভ্যস্ত হয়েছে যে হাতে তৈরি রুটি বা মুড়ি খায় না। ফ্ল্যাটে বন্দি জীবন চার দেওয়ালের মধ্যেই ডুকরে কাঁদে। কচিৎ কদাচিৎ যদিও বা খেলার সুযোগ মেলে, কিন্তু পড়ার ভারী ব্যাগটা সামলে হয় না কোনও এক্সাসাইজ। ব্যস্ত জীবনে বাবা-মা-ও হাতে করা খাবার চেয়ে ফাস্টফুডের দিকে জোর দেন। তাদের যুক্তি বাচ্চারা এটা ভালোবাসে। এ তো গেল বাচ্চাদের কথা। এরপর আসা যাক কলেজে পড়া বা তার থেকে একটু বেশি বয়সি যুবক-যুবতীদের কথায়। তাঁরা স্থূলতা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নিজেরাই ডায়াট চার্ট করেন। ভাবেন খাবার কম খেলেই বোধহয় রোগা হওয়া যায়। অনেক ক্ষেত্রেই তারা ব্রেকফাস্টটা খান না, স্কিপ করে যান। বিশেষ করে গৃহবধূরা, যারা সকালে পুজো করে কিছু খান, তাদের তো ব্রেকফাস্ট হয় দুপুর ১২টার পর। এতে ফ্যাট আরও বৃদ্ধি পায়। বিয়ের পর এবং মা হওয়ার পর বাচ্চার পুষ্টি হচ্চে না ভেবে মা-রা নানা ধরনের খাবার খেতে থাকেন। আটার রুটি বিশেষ করে চাকিতে পেশা গমের রুটি অথবা জোয়ার, বাজরা বা রাগির আটার রুটি ব্রেকফাস্টে থাকে না বললেই চলে। কিন্তু এই খাবারগুলি ব্রেকফাস্টে অত্যন্ত জরুরি। চিড়ে, মুড়ি যেগুলোতে ফ্যাট থাকে না, সে রকম খাবারও খেতে পারেন। স্যালাড একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খাদ্য। তা ফলের হতে পারে, সবজিরও হতে পারে। BMR ঠিক রাখতে শুধুই নিয়ম করে খেতে হবে তাই নয়, নির্দিষ্ট মাত্রায় ঘুমও জরুরি। আগে অনেকে বলতেন ৬ ঘণ্টা ঘুমই যথেষ্ট। এখন সে জায়গায় ৮ ঘণ্টা ঘুম মানুষের জরুরি বলে মনে করি আমরা। এর পাশাপাশি শরীর ঠিক রাখতে এক্সাসাইজ করা অন্তত ১৫ মিনিট, পাশাপাশি যারা নাচ জানেন, তারা নাচ করলেও হবে। সাঁতার, স্কিপিং, জগিং— পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে নিজেদেরকে যত্ন নেওয়া যায়, তাহলে এই ওবেসিটি রোগ থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া যায়। বর্তমান যুগে বন্ধ্যাত্ব মেয়েদের একটা অতি পরিচিত শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। পাশাপাশি PCOS, থাইরয়েড ইত্যাদি নানা সমস্যায় ভোগেন মহিলারা। পুরুষদেরও নানা ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভুগতে হয়। এই রোগগুলির ক্ষেত্রে অন্যতম কারণ স্থূলতা বা মোটা হয়ে যাওয়া। সেক্ষেত্রে সোনালীর টিপস— প্রচুর জল খান, প্রচুর শাকসবজি বা ফাইবার জাতীয় খাবার খান। ৩০ বছর বয়সের পর ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট নিতে হবে। বাইরে থেকে ট্যাবলেট না খেয়ে, ডাল, দুধ ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। মোটামুটি একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ সকালে নিয়মিত হেভি ব্রেকফাস্ট করবেন। ব্রেকফাস্টে কার্বোহাইড্রেড ও প্রোটিন যথেষ্ট পরিমাণে থাকবে। ফ্যাট থাকবে, কিন্তু তা অতি অল্প পরিমাণে। এরপর লাঞ্চ। যারা বাইরে চাকরি করেন, লাঞ্চ করতে দেরি হলে মাঝে একটা ফল খেতে পারেন। ফল লাঞ্চের পর ব্রেকফাস্টের পরও খাওয়া যায়। এরপর চিড়ে, মুড়ি বা খাই মুড়কি, অঙ্কুরিত ছোলা খেতে পারেন। ডিনার করুন নির্দিষ্ট সময়ে।
সুস্থ শরীর ও স্থূলতা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সারাদিনে এই চারটি ফুল মিল নেওয়া প্রয়োজন। মনে রাখবেন ব্রেকফাস্ট লাঞ্চ ডিনার নেওয়ার সময় যেন একই থাকে। অর্থাৎ সকাল ৮টায় যদি ব্রেকফাস্ট করেন তার পরদিন সকাল ১১টায় করেন বা লাঞ্চের ক্ষেত্রেও কোনদিন বেলা ১২টা, কোনওদিন বেলা ৩টে— এরকম করলে ওবেসিটির শিকার হবেন।
সর্বশেষে যে কথাটি বলব, তা হল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা হল সকাল-বিকাল-রাত যখনই সময় পাবেন ১৫ মিনিট ব্রিস্ক ওয়াক যদি করতে পারেন, তা হলে আপনার ফিটনেস দেখে সবাই বলবে কেয়াবাত। 

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*