ত্রিপুরা হাইকোর্টে কিছুটা স্বস্তিতে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া ও থানায় বিক্ষোভের অভিযোগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ ছয়জন তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল ত্রিপুরা পুলিশ ৷ সেই মামলায় হস্তক্ষেপ করে পুলিশের কাছে ঘটনার দিনের ভিডিয়ো রেকর্ড চেয়ে পাঠিয়েছেন হাইকোর্টের মুখ্য বিচারপতি ৷ মামলার পরবর্তী শুনানি ২ সেপ্টেম্বর ধার্য করা হয়েছে ৷ সেই শুনানি হওয়ার আগে পুলিশ কোনও ফাইনাল রিপোর্ট পেশ করতে পারবে না বলেও স্পষ্ট করে দিয়েছে আদালত ৷
খোয়াই থানা ঘেরাও করায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে ত্রিপুরা পুলিশ। মামলায় নাম রয়েছে কুণাল ঘোষ, ব্রাত্য বসু, দোলা সেনেরও। এফআইআরে নাম রয়েছে ত্রিপুরা তৃণমূলের নেতা সুবল ভৌমিক এবং প্রকাশ দাসেরও। রবিবার খোয়াই থানায় তৃণমূলের ধর্নার জেরে এফআইআর দায়ের করে পুলিশ। এফআইআরে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া, পুলিশকে কটূক্তি করার অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযুক্তদের আদালতে পেশ করতে গিয়েও পুলিশকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় বলে অভিযোগ। সেই কারণে সরকারি কাজে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে লেখা হয় এফআইআরে।
সেই এফআইআর-কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ত্রিপুরা হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন সুবল ভৌমিক ৷ সেই আবেদনের শুনানিতে ঘটনার দিনের যাবতীয় রেকর্ড চেয়ে পাঠিয়েছে আদালত ৷ আগামী শুনানি না-হওয়া পর্যন্ত পুলিশের চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি করাতেও স্থগিতাদেশ দিয়েছে ত্রিপুরা হাইকোর্ট ৷
তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ টুইটে আজ জানিয়েছেন, “অভিষেক মামলায় হস্তক্ষেপ করেছে হাইকোর্ট ৷ কেস ডায়েরি তলব করা হয়েছে ৷ পুলিশ ফাইনাল রিপোর্ট দিতে পারবে না ৷ ২ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানি ৷” জামিনযোগ্য মামলায় তৃণমূল নেতাদের কেন এতক্ষণ আটক করে রাখা হল, বিচারপতি পুলিশকে সেই প্রশ্নও করেছেন বলে জানান কুণাল ঘোষ ৷
গত ৭ অগস্ট তৃণমূলের যুব নেতৃত্ব ত্রিপুরায় একটি দলীয় কর্মসুচিতে যোগ দিতে গেলে তা নিয়ে ধুন্ধুমার বাধে ৷ দেবাংশু ভট্টাচার্য, সুদীপ রাহা ও জয়া দত্তদের উপর হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে ৷ এরপর তাঁদের সুরক্ষা দেওয়ার নাম করে থানায় নিয়ে গিয়ে ত্রিপুরা পুলিশ যড়যন্ত্র করে ১৪ জনকে গ্রেফতার করে বলে অভিযোগ করে তৃণমূল কংগ্রেস ৷
পরিস্থিতি এতটাই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে যে নিজে আসরে নামেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি ব্রাত্য বসু, কুণাল ঘোষ, দোলা সেনকে নিয়ে অবস্থান বিক্ষোভ দেখান খোয়াই থানায় ৷ তৃণমূল নেতারা জামিন না-পাওয়া পর্যন্ত থানায় ঠায় বসে থাকেন অভিষেক। তৃণমূল নেতারা আদালতে যাওয়ার সময় ফের তাঁদের উপর হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে ৷ সন্ধেয় তৃণমূল কর্মীরা জামিন পাওয়ার পর অভিষেক হুঙ্কারের সুরে বলেন, “ত্রিপুরা থেকে বিজেপির সরকারকে উৎখাত করে ছাড়ব ৷ আজও জিতেছি, আগামী দিনেও জিতব ৷”
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ অভিযোগ করেন, “পুলিশ ফাঁদে ফেলে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করেছে ৷ ভিত্তিহীন ধারায় মামলা করেছে ৷ আমরা সেগুলি প্রত্যাহার করতে বলেছিলাম ৷ এটা প্রমাণিত যে, পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে মামলা সাজিয়ে তৃণমূল নেতাদের নিয়ে এসেছে ৷ ওরা এই পথে আসতে চায়নি ৷ পুলিশ পাহাড়ি ফাঁকা রাস্তায় ওঁদের নিয়ে গিয়েছে, যেখানে বিজেপি সমর্থকরা জটলা বেঁধেছিল ৷ বিজেপি হামলা চালানোর পর তৃণমূল নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা দেওয়ার নাম করে থানায় বসিয়ে রাখা হয় ৷ পরে সেই পুলিশই আবার নাইট কার্ফু ভাঙার অভিযোগ এনে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে ৷”
Be the first to comment