রাত ১২টা নাগাদ শেষবার ফোনে কথা হয়েছিল। তারপর ১২ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু কোনও খবর আসেনি। ফলে উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে উত্তরাখণ্ডে বেড়াতে গিয়ে ধসে আটকে পড়া হাওড়ার পর্যটকদের পরিবারের।
জানা গিয়েছে, পুজোর ছুটিতে হাওড়া, হুগলি, কলকাতা থেকে উত্তরাখণ্ডে বেড়াতে গিয়ে আটকে পড়েছেন ১৪ জন বাঙালি পর্যটক। তাঁরা গত ১২ অক্টোবর, সপ্তমীর রাতে ট্রেন ধরেছিলেন। সোমবার রাতে অর্থাৎ ১৮ অক্টোবর তাঁদের হাওড়ার ট্রেন ধরার কথা ছিল। কিন্তু ফিরতি ট্রেন ধরার প্রাক্কালে সোমবার রাতেই মেঘভাঙা বৃষ্টি ধস নেমে বিপর্যস্ত অবস্থা নৈনিতাল সহ উত্তরাখণ্ডের বিস্তীর্ণ এলাকার। ফলে মাঝপথেই আটকে পড়েছেন ওই ১৪ জন বাঙালি পর্যটক। যার মধ্যেই অধিকাংশই হাওড়ার কোনার বাসিন্দা। ফলে চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে তাঁদের আত্মীয়-পরিজনদের।
উত্তরাখণ্ডে ধসে আটকে পড়া বাঙালিদের মধ্যে হাওড়ার কোনার বাসিন্দা মলি কাঁড়ারের স্বামীও রয়েছেন। স্বামীর চিন্তায় উদ্বিগ্ন মলিদেবী বলেন, ‘গতকাল রাত ১২টা নাগাদ ফোন করে জানায় ওঁরা ধসে আটকে পড়েছে। ট্রেন ধরতে পারবে না। তারপর আজ সকাল থেকে ফোনের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়নি। খুব চিন্তা হচ্ছে’ মলি কাঁড়ারের স্বামীর সঙ্গে এই ট্যুরে তাঁদের প্রতিবেশী বাসন্তী মান্নার ছেলে, পুত্রবধূ ও নাতিও গিয়েছে। তাঁদের চিন্তায় উদ্বিগ্ন বাসন্তী দেবী এখন ঈশ্বরের উপরই ভরসা করছেন।’
মলিদেবী, বাসন্তীদেবীরা জানান, ১৪ জনের ওই গ্রুপটি প্রথমে নৈনিতাল যায়। তারপর আলমোরা, রানিখেত হয়ে কাঠগুদাম থেকে ফেরার ট্রেন ধরার কথা ছিল। সেইমতো সোমবার তাঁরা গাড়ি করে রানিখেত থেকে কাঠগোদামের দিকে যাচ্ছিলেন। তখনই কাচছি ধাম এলাকায় পাহাড়ি ধসের কবলে পড়েন বলে জানিয়েছেন আটকে পড়া যাত্রীরা। ধসের পাশাপাশি প্রবল ঝোড়ো হাওয়া এবং মেঘভাঙা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে পড়েন তাঁরা। মাঝপথে গাড়িতেই আটকে পড়েন। অবশেষে গ্রামবাসীদের সহায়তায় একজনের বাড়িতে রাতে আশ্রয় মেলে বলে ফোনে জানিয়েছেন মলিদেবীর স্বামী। কিন্তু এদিন সকাল থেকে আর তিনি ফোন করেননি। বাসন্তীদেবীও ছেলে, পুত্রবধূর ফোন পাননি।
তাঁদের আরেক প্রতিবেশী উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, ‘আমার দাদা-বৌদিও ওই গ্রুপে আছে। তাঁদের ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। কোথায়, কীভাবে আছে, আদৌ উদ্ধার হয়েছে কিনা জানি না।’ তাই তাঁদের উদ্ধারের জন্য এদিন সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন কোনার বাসিন্দা উজ্জ্বল।
এদিকে, আগামীকাল অর্থাৎ বুধবার সকালে সকলের বাড়ি ফেরার কথা থাকলেও কাঠগোদাম স্টেশন থেকে ট্রেন ধরতে না পারায় নির্ধারিত দিনে তাঁদের যে বাড়ি ফেরা হচ্ছে না তা নিশ্চিত। কবে, কীভাবে ফিরতে পারবেন তা নিয়ে সংশয়ে সকলেই। এখন সকলের একটাই প্রার্থনা, রাজ্য সরকার কিছু ব্যবস্থা নিক, যাতে ঘরের লোকেরা সুস্থভাবে ঘরে ফিরে আসেন।
Be the first to comment