ত্রিপুরা জয়ের লক্ষ্যে পুরোদমে কাজে নেমে পড়লো তৃণমূল এবং তাদের নির্বাচনী কাজকর্মের দায়িত্বে থাকা ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আইপ্যাক ৷ বৃহস্পতিবার থেকে রাজ্যে ‘ত্রিপুরার জন্য তৃণমূল’ নামের ১২ দিনের জনসংযোগ কর্মসূচি শুরু করল তারা ৷ এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা পৌঁছে দেওয়া হবে ৷
বাংলায় অভূতপূর্ব সাফল্যের পর ২০২২-এর গোয়া এবং ২০২৩-এর ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে জোড়াফুল ফোটানোর চেষ্টায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং টিম পিকে জুটি ৷ এর মধ্যে গোয়ার চেয়ে আপাতত ত্রিপুরাতেই খানিকটা হলেও ভিত মজবুত করতে পেরেছে তৃণমূল ৷ সেখানে ‘বাংলা নিজের মেয়েকে চায়’ স্লোগান যে খাটবে না, তা-ও অনুধাবন করতে পেরেছে তারা ৷ সেই কারণেই, বিজেপি থেকে আশিস দাসের মতো নেতাকে দলে টানা হয়েছে ।
কংগ্রেস থেকেও দলে দলে লোকজন তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। যদিও মমতাকে সামনে রেখেই ত্রিপুরায় ক্ষমতাদখলের লড়াইয়ে নামছে তৃণমূল, তবে বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনের আগে যে ভাবে পিকে-র রণকৌশল ধরেই এগিয়েছিল তৃণমূল, ত্রিপুরাতেও তার অন্যথা হবে না। আগামী ১২ দিন ধরে ‘ত্রিপুরার জন্য তৃণমূল’ কর্মসূচি চলবে সেখানে। তার আওতায় সেখানকার ৮টি জেলা, ৫৮টি ব্লক এবং ২০টি শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে যাবেন দলবীয় নেতৃত্ব। ক্ষমতায় এলে কী ভাবে তৃণমূল কাজ করবে, তা বোঝানো হবে সাধারণ মানুষকে। রাজ্যের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য, রাজ্য যুব কমিটি এবং স্থানীয় নেতারা তিন ভাগে ভাগ হয়ে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত এই জনসংযোগ কর্মসূচি চালাবেন।
এর আগে, গেরুয়া দাপটে বাংলায় যখন কার্যত কোণঠাসা তৃণমূল, সেই সময় বিজেপি-র মতো তারকা-সম্বলিত প্রচারে না গিয়ে, একেবারে মাটির কাছাকাছি থেকে সাধারণের কাছে পৌঁছে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন পিকে। তার জন্য, তিনটি পর্যায়ে রণকৌশল তৈরি করেন তিনি। প্রথম পর্যায়ে ছিল ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি, যার আওতায় নিজেদের অভাব অভিযোগ সরাসরি মমতার কাছে পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন বাংলার মানুষ ৷ দ্বিতীয় পর্যায়ে ছিল ‘বাংলার গর্ব’ কর্মসূচি। এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে মমতা সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মসূচি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয় ৷ আর সর্বশেষে ছিল মুখে মুখে ‘বাংলা নিজের মেয়েকে চায়’ স্লোগান ছড়িয়ে দেওয়া ৷ ত্রিপুরায় কাকে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ করে এগোবে তৃণমূল, তা যদিও এখনও ঠিক হয়নি, তবে বিপ্লবের মোকাবিলা করতে ভূমিপুত্রকেই যে তারা তুলে ধরবে, তা সন্দেহাতীত ৷
বাংলায় বিজেপির প্রবল আস্ফালন সত্ত্বেও যে ভাবে বিপুল সমর্থন নিয়ে তৃতীয় বার ক্ষমতায় ফিরেছেন মমতা, তাতে জাতীয় রাজনীতিতেও তৃণমূলের অবস্থান নিয়ে নতুন সমীকরণের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে ৷ চাইলে একমাত্র তৃণমূলই বিজেপি-কে উৎখাত করতে পারে, মানুষের মনে এমন একটা ধারণা তৈরি করতে তৃণমূলের তরফেও চেষ্টায় কোনও ত্রুটি নেই ৷ ত্রিপুরায় তাদের এই ফর্মুলা কাজে লাগে কি না, এখন সেটাই দেখার ৷ তবে দীর্ঘ বাম শাসনের পর বিজেপি-র রাজত্বে ত্রিপুরার অবনতি বই উন্নতি হয়নি বলে দাবি তৃণমূলের ৷ তাই সেখানে জোড়াফুল ফোটানো নিয়ে আত্মবিশ্বাসী তারা ৷
Be the first to comment