প্রশাসনিক বৈঠক তখন প্রায় শেষের মুখে। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কখনও নেতাদের ধাতানি দেখা গিয়েছে, কখনও বা পরিবেশ হালকা করতে গিয়ে মজাও করেছেন। মোটের উপর মমতা আজ বেশ ভাল মুডেই ছিলেন। মিটিং প্রায় শেষ হব হব। হঠাৎ ‘রঙিন ছেলে’ মদনের খোঁজ শুরু করলেন তৃণমূল নেত্রী। সবার চোখ তখন ইতুউতি ঘুরছে। কিন্তু মদন কোথায়?
বৈঠক শেষ হতে তখন মিনিট পাঁচেক বাকি। একাধিক প্রকল্পের সূচনা করে আসন থেকে উঠে দাঁড়িয়েছেন মমতা। হঠাৎ কী যেন মনে হল তাঁর। তিনি বলে উঠলেন, ‘আরে মদন মিত্র কিছু বলল না তো! ওকে তো আমি এতক্ষণ দেখতেই পাইনি!’ পাশ থেকে সৌগত রায়কে বলতে শোনা গেল, ‘ওঁকে একটু বলতে দাও’।
অন্যদিকে মমতার টিপ্পনী, “ও আর কী বলবে, এখন চেয়ারম্যান হয়েছে স্টেট ট্রান্সপোর্ট ডিপার্টমেন্ট না কীসের যেন”। তারপর মমতা যোগ করেন, “ও বলবে না। রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইবে”। কিন্তু কামারহাটির বিধায়কের দেখা নেই যে! কোথায় তিনি?
তারপর মমতার চোখ যায়, দলের সাংসদ নুসরত জাহানের দিকে। জানান, তাঁকেও এতক্ষণ খেয়াল করেননি। আর তার মধ্যেই শোনা গেল মমতার ‘রঙিন ছেলের’ গলা। গম্ভীর গলায় মদন বলে উঠলেন, “আপনার (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) দেওয়া নির্দেশ যথাযথ ভাবে পালন করছি’। সবাই ফের সামনে তাকালেন। নরম গলায় মমতাকে বলতে শোনা গেল, “তুমি অন্য কিছু গাইছ না তো, রবীন্দ্র সঙ্গীত ছাড়া?” উত্তরে মদন জানান, না তিনি আজকাল স্রেফ রবীন্দ্র সঙ্গীত নিয়েই আছেন। তিনি বলেন, ‘শুধুই রবীন্দ্র সঙ্গীত’। শুনে প্রসন্নতার হাসি খেলে যায় মমতার মুখে। বলেন, ‘ওকে ঠিক আছে’।
প্রশাসনিক বৈঠকে উপস্থিত সবার মুখে তখন হাসি, তার মধ্যে কেউ একজন বলে উঠলেন ‘ও লাভলি’। এদিকে মদনের সঙ্গে কথা বলেই প্রশাসনিক বৈঠক সমাপ্ত করলেন মমতা। বসলেন এক কাপ চা নিয়ে।
তিনি মমতার বহু পুরনো সৈনিক। বিধায়ক নয়, তৃণমূল নেত্রীর সৈনিক হিসাবেই নিজের পরিচয় দিতে পছন্দ করেন মদন গোপাল মিত্র। ফেসবুক লাইভে তিনি জানান, ‘এম এম ইজ আ কালারফুল বয়। নট পাওয়ারফুল’। আজকাল কথায় কথায় গান খেলে যায় তাঁর গলায়। এমনকি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরের গানের কলি বসিয়ে দেন তৃণমূল বিধায়ক। ভোটের আগে বিরোধীদের বিঁধে গান ধরেছেন। তার পর পুজোর সময়ও একটা গোটা মিউজিক ভিডিয়ো করেছেন মদন মিত্র। কিন্তু তাঁর নেত্রীর কথায় এখন শুধুই রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইবেন তিনি। প্রশাসনিক বৈঠকে জানালেন নিজেই।
Be the first to comment