অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে ইস্তফা দিলেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে। সূত্রের খবর, এদিন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের কাছে ইস্তফাপত্র জমা দেন দ্বীপরাষ্ট্রটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী চান্না জয়াসুমনও। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, এদিন সহোদর তথা শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের কাছে ইস্তফাপত্র জমা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা বলে খবর।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এবার সব রাজনৈতিক দলগুলিকে একটি যৌথ ক্যাবিনেট তৈরির জন্য আমন্ত্রণ জানাতে চলেছেন প্রেসিডেন্ট গোতবায়া। এহেন রাজনৈতিক ডামাডোলের মাঝে দেশজুড়ে কারফিউ চলছে। রাজধানী কলম্বোয় দেশের বর্তমান শাসকদল ‘শ্রীলঙ্কা পদুজানা পেরামুনা’র সমর্থক ও সরকার বিরোধীদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে বলেই আশঙ্কা।
দেশের সবচেয়ে বড় আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। ক্ষমতাসীন রাজপক্ষে পরিবারের দুর্নীতি এবং অযোগ্যতার ফলেই এই অবস্থা বলে মনে করেন শ্রীলঙ্কাবাসীরা। দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের দাবি ছিল, প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে এবং প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের পদত্যাগ। কিছুদিন আগেই মন্ত্রিসভা থেকে পরিবারের সকল সদস্যদের সরিয়ে দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট। বিশেষজ্ঞরা অনেকেই মনে করছেন, দায় এড়াতেই পরিবারের সদস্যদের সরিয়ে দিয়েছেন গোতাবায়া। তবে শ্রীলঙ্কার এই দুর্দশা যে তাঁরই ভুলে, তা স্বীকার করেছেন গোতাবায়া। সেই ভুল শুধরে নিতে চান বলেও দাবি করেছিলেন তিনি।আগামী দিনে নতুন প্রধানমন্ত্রী দেশের হাল ধরতে পারেন কিনা, সেদিকে তাকিয়ে শ্রীলঙ্কাবাসী।
বিশ্লেষকদের মতে, রাজাপক্ষেরা চিন ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। নিজের শাসনে বেজিংকে অনৈতিকভাবে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে। অনেকেই মনে করছেন, শক্ত হাতে এলটিটিই বা তামিল বিদ্রোহীদের শেষ করলেও দেশ চালাতে গিয়ে নীতিগত বিভ্রান্তির জেরে বিপাকে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে ও তাঁর ভাই। মুদ্রাস্ফীতির ধাক্কায় শ্রীলঙ্কার বাজারে রীতিমতো দাবানল। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, সেদেশে চাল ও গম বিক্রি হচ্ছে মোটামুটি ২২০ টাকা ও ১৯০ টাকা কেজি দরে। এদিকে চিনি বিকোচ্ছে ২৪০ টাকা কেজিতে। নারকেল তেলের দর ৮৫০ টাকা প্রতি কেজি। একটি ডিমের দাম ৩০ টাকা।
উল্লেখ্য, চিন থেকে ঋণ নিয়েও বিপাকে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। দেশটির বিদেশি ঋণের পরিমাণ বিপুল আকার ধারণ করেছে। গত সাত দশকে সবচেয়ে বড় আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছে দ্বীপরাষ্ট্রটি। বিদ্যুতের অভাবে ব্ল্যাক আউট চলছে দেশে। খাবার, ওষুধ অগ্নিমূল্য। এমনকী মিলছে না প্রতিদিনের প্রয়োজনের রান্নার গ্যাস। এই অবস্থায় অনেকেই শ্রীলঙ্কা ছেড়ে ভারতে চলে আসছেন। দেশজুড়ে চলছে বিক্ষোভ।
Be the first to comment