কয়লা পাচার মামলায় নয়া মোড়। দিল্লি হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লির পরিবর্তে কেন কলকাতায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী রুজিরাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে না ED? এ নিয়ে প্রশ্ন করে সুপ্রিম কোর্ট। এই প্রেক্ষিতে দেশের শীর্ষ আদালত জানায়, কলকাতায় ইডি আধিকারিকদের যাতে সুরক্ষা দেওয়া হয়, সে ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হবে। যাতে কলকাতায় গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালাতে পারে ইডি।
কেন কলকাতার বদলে দিল্লিতে অভিষেককে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় ইডি, এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ইডির পক্ষ থেকে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এস ভি রাজু এদিন শীর্ষ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, অতীতে কলকাতায় সিবিআই আধিকারিকদের ঘেরাও করা হয়েছিল। পাশাপাশি অভিষেক একজন প্রভাবশালী রাজনীতিক। অভিষেক ও রুজিরাকে সাক্ষী হিসেবে তলব করছেন না কি অভিযুক্ত হিসেবে, এ ব্যাপারেও জানতে চায় শীর্ষ আদালত। এই মামলার পরবর্তী শুনানি ১৭ মে।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষ থেকে এদিন দেশের শীর্ষ আদালতে জানানো হয় যে, তদন্তে সহযোগিতা করতে তাঁরা প্রস্তুত। উল্লেখ্য, কয়লা পাচারকাণ্ডে কেন কলকাতায় এসে ইডি তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে না, এ নিয়ে আগেও সোচ্চার হয়েছেন অভিষেক।
সম্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেছে দিল্লির পাতিয়ালা হাউস কোর্ট। জানা যায়, অভিষেক-পত্নীর বিরুদ্ধে জামিন যোগ্য পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। কয়লা পাচারকাণ্ডের তদন্তে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজিরা না দেওয়ায় পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। কয়লা পাচারকাণ্ডে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দু’বার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ED। তবে, একাধিক বার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ পাঠালেও ইডির কাছে হাজিরা দেননি রুজিরা। চলতি বছরের ২১ ও ২২ মার্চ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় ও রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিল্লিতে ইডির দফতরে হাজিরা দেওয়ার জন্য সমন জারি করেছিল ইডি। এর আগে ইডির সমনের বিরিুদ্ধে দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অভিষেক। তবে আদালত এই মামলায় কোনও হস্তক্ষেপ করেনি। শেষবার অভিষেককে দীর্ঘক্ষণ ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সেই ঘটনাক্রমের পর যেভাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রীর বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করল ইডি, তাতে এই পর্বে নয়া মাত্রা যোগ করল বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ।
কয়লা পাচারকাণ্ডে অতীতে সংবাদমাধ্যমে অভিষেক বলেছিলেন, ”বাংলায় হেরে গিয়েছে তাই ওদের এত গাত্রদাহ। সেই থেকেই প্রতিহিংসার বশে এই ধরণের রাজনীতি করছে। এর শেষে দেখে ছাড়ব আমি। প্রয়োজন হলে উচ্চ আদালতে যাব। কিন্তু, যারা ক্ষমতায় বসে আছে, তাদের কাছে কিছুতেই মাথা নোয়াব না। একমাত্র মানুষের কাছেই মাথা নিচু করব… ইডি-সিবিআইয়ের ভয় দেখিয়ে যাঁদের কোণঠাসা করে রেখেছে, অভিষেক তাঁদের মতো নয়। আমি আত্মসমর্পণ করব না।” ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ আরও বলেছিলেন, ”কেউ বলছে ১০০ কোটির স্ক্যাম, কেউ বলছে ১০০০ কোটি। আমি বলছি যদি ১০ পয়সারও দুর্নীতি থাকে প্রমাণ করে দেখান। আমি বলছি আমার পিছনে ইডি-সিবিআই লাগানোর দরকার নেই। সোজা ফাঁসির মঞ্চ গড়ে দিন। আমি মৃত্যুবরণ করব।” তিনি আরও বলেছিলেন, ”যে কোনও সর্বভারতীয় BJP-র নেতা যদি আমার সঙ্গে মিনিট পাঁচেকের জন্যেও বসেন আমি সব তথ্য দেখিয়ে দেব, কেন্দ্রীয় সংস্থা কী ভাবে কাজ করেছে। আমি প্রমাণ করতে না পারলে রাজনীতি ছেড়ে দেব। যারা টাওয়ালে মুড়ে টাকা নিয়েছেন সবই টিভিতে দেখা গিয়েছে। এদিকে চার্জশিটে তাঁদের নাম থাকে না।”
Be the first to comment