মেট্রোর কাজের জেরে অবলুপ্তির পথে আস্ত একটা পাড়া

Spread the love

বউবাজারের স্যাঁকরা পাড়া লেন ৷ আদি কলকাতার এক ঐতিহ্যবাহী এবং জমজমাট এলাকা এটি ৷ যেখানকার বাড়িগুলির গড় বয়স একশো পেরিয়েছে ৷ কিন্তু, সেই স্যাঁকরা পাড়া লেন আজ জনশূন্য ৷ কলকাতার ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সম্প্রসারণের কাজের জেরে ২০১৯ সালে ধস নেমেছিল সেখানে ৷ মাঝে আড়াই বছরের বিরতির পর গত বুধবার রাত থেকে ফের ধস আতঙ্ক ফিরে এসেছে স্যাঁকরা পাড়া লেনে ৷ ফল স্যাঁকরা পাড়া লেনের ১৫টি বাড়ির মধ্য মাত্র ৩টি বাড়িতে এখন মানুষের বসবাস ৷ কার্যত জনশূন্য শ্মশানে পরিণত হয়েছে, একসময়ের জমজমাট এই পাড়া ৷

চারদিকে ধ্বংসের চিহ্ন ৷ ২০১৯ সালে এই স্যাঁকরা পাড়া লেনের একটি বাড়ি ধসে পড়েছিল ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের জেরে ৷ এমনকি বেশ কয়েকটি বাড়িতে ফাটল ধরেছিল ৷ সেই সময় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলি খালি করে দেওয়া হয়েছিল ৷ পরবর্তী সময়ে লোকজন ফিরে এলেও, কয়েকটি বাড়ি ফাঁকাই ছিল ৷ মাঝে দু’বছর করোনা অতিমারির প্রকোপ গিয়েছে ৷ তার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ফের ধস আতঙ্ক ফিরে এসেছে বউবাজারের স্যাঁকরা পাড়া লেনে ৷ যার ফল একটা সম্পূর্ণ পাড়া ক্রমশ অবলুপ্তির পথে।১৫টি বাড়ির ৩টিতে এখন মানুষের বসবাস ৷ জনমানসহীন হয়ে পড়ে আছে ১২টি বাড়ি ৷ আর যে তিনটিতে এখনও লোকজন থাকছেন, তা আর কতদিন? তা সেই বাড়ির বাসিন্দারাও জানেন না ৷

তেমনি একটি বাড়ি হল স্যাঁকরা পাড়া লেনের দত্তদের বাড়ি ৷ গৃহকর্তা গড়াচাঁদ দত্ত ৷ পৈতৃক এই বাড়ি আর কতদিন ধরে রাখতে পারবেন তা তিনি জানেন না ৷ কোনদিন তাঁর বাড়িতেও ফাটল দেখা দিতে পারে ৷ তখন সপরিবার তাঁকেও হয়তো ছোট থেকে বড় হওয়া স্মৃতি বিজড়িত এই বাড়ি ছাড়তে হতে পারে ৷ সেই আশঙ্কাতেই দিন গুণছেন তাঁরা ৷ জানালেন, একসময় ওই পাড়ার প্রতিটি বাড়িতে সবার যাওয়া আসা ছিল ৷ যে কোনও উৎসবে পাড়ার সকলে মিলে আনন্দ করতেন ৷ একে অপরের বিপদে পাশে দাঁড়াতেন ৷ আজ স্যাঁকরা পাড়া লেন বিলুপ্ত হতে বসেছে ৷

বাড়ির গৃহকর্ত্রী শুভ্রা দত্ত জানালেন, তাঁর হাতের চা খাওয়ার জন্য মাঝে মধ্যে পাড়ার লোকজন আসতেন ৷ চলত গল্পগুজব ৷ গত আড়াই বছরে সে সব উধাও হয়ে গিয়েছে ৷ কষ্ট চেপে রাখতে না পেরে বলেই ফেললেন, বিয়ের পর এই পাড়ায় এসে উঠেছিলেন ৷ সেই সময় আর এই সময়ের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ ৷ শ্মশানের নিস্তব্ধতা গ্রাস করে তাঁদের ৷ আক্ষেপের সঙ্গে জানালেন, মেট্রোর কাজ কতগুলি পরিবারের স্বপ্ন, আবেগ, স্মৃতিকে নিমেষের মধ্যে শেষ করে দিল ৷

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*