গুলি চলেছে পার্ক সাকার্সে৷ মৃত্যু হয়েছে এক মহিলার৷ শুক্রবার দুপুর ২টোয় টিভিতে খবরটা দেখে খুব একটা বিচলিত হননি প্রবীর রায়৷ এর কিছুক্ষণ বাদেই মৃতার নাম জানতে পারেন৷ সেটাও ওই টিভি চ্যানেলের দৌলতে৷ মুহূর্তে যেন মাথায় বাজ ভেঙে পড়ে৷ পার্ক সার্কাসে কনস্টেবলের গুলিতে নিহত ওই মহিলা আর কেউ নন, দাসনগরের বাসিন্দা রিমা৷ যাঁর সঙ্গে তাঁর বিয়ের কথাবার্তা চলছে৷ খবরটা পেয়েই তিনি চলে যান হবু শ্বশুরবাড়িতে৷ সেখানে তখন কান্নার রোল৷ রিমার মা-বাবা শোকে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন৷ একমাত্র ভাই ঘরে চিৎকার করে কাঁদছে৷ বাড়িতে সাংবাদিকদের গিজগিজে ভিড়৷ বাড়িওয়ালা ও প্রতিবেশীরা জড়ো হয়েছেন ১৩৩ ফকির মিস্ত্রিবাগানের ওই বাড়িতে৷ প্রবীর গিয়ে রিমার বাবাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন৷
আজই সন্ধ্যায় তাঁদের রিমার বাড়িতে আসার কথা ছিল বিয়ে নিয়ে কথাবার্তা বলতে৷ কিন্তু সেই কথাই অসম্পূর্ণ থেকে গেল৷ রিমা আর বেঁচে নেই৷ কলকাতা পুলিসের এক কনস্টেবলের এলোপাথাড়ি গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন তিনি৷ প্রবীর বলেন, ‘টিভিতে খবরটা পেলাম৷ তখন নামটা জানতে পারিনি৷ পরে অন্য এক চ্যানেলে রিমা সিংহ নামটা দেখলাম৷ মৃতার আরও বিবরণ দিচ্ছিল টিভি চ্যালেনগুলো৷ সবটা শুনে পুরোপুরি নিশ্চিত হলাম, টিভিতে যাঁর কথা বলা হচ্ছে সে আমার হবু স্ত্রীই৷ খবরটা শুনে স্তম্ভিত হয়ে যাই৷ সঙ্গে সঙ্গে ওর বাড়ি আসি৷ তারপর বেনিয়াপুকুর থানায় ফোন করি৷ থানার এক আধিকারিক ওখানে যেতে বলেন৷’
মেয়ের মৃত্যুর খবরে শোকস্তব্ধ মা মীরা সিংহ৷ তিনি বলেন, ‘আজ রিমার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে আসার কথা ছিল ওর শ্বশুরবাড়ির লোকেদের৷ ছেলের বাবা মারা গিয়েছে একবছরও হয়নি৷ বাবার কালশৌচ মিটে গেলে বিয়ে হত৷’ রিমার বাবা পাঁচ বছর ধরে ঘরে বসে৷ ভাইও কিছু করে না৷ পরিবারে একমাত্র রোজগেরে বলতে রিমাই ছিলেন৷ সংসারটা তিনিই চালাতেন৷ ফিজিওথেরাপির ট্রেনিং নিচ্ছিলেন রিমা৷ সেই কাজেই বাইরে গিয়েছিলেন৷ বেরনোর আগে সন্ধের মধ্যে বাড়ি ফেরার কথা জানিয়েছিলেন৷ কিন্তু আর বাড়ি ফেরা হল না রিমার৷
Be the first to comment