নবী হজরত মহম্মদকে নিয়ে বিজেপি নেতানেত্রীর আপত্তিকর মন্তব্যের জের গড়াল এবার আদালতে। ইসলাম বিদ্বেষী এমন ঘটনার প্রচিবাদে বৃহস্পতিবার দিনভর হাওড়ার বিভিন্ন জায়গায়, জাতীয় সড়কের একাংশ অবরোধের জেরে চূড়ান্ত ভোগান্তির শিকার হন জনতা। খবর পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজে অবরোধ না করার আবেদন জানিয়েছিলেন বৃহস্পতিবার। কিন্তু তাঁর আবেদনে সাড়া দিল না বিক্ষোভকারীরা। ফের রেল-রাস্তা অবরোধ করে সাধারণ মানুষজনের দুর্ভোগ বাড়াল। ধারাবাহিকভাবে এ ধরনের জনস্বার্থ বিরোধী কর্মসূচি দমনে পুলিশও পালটা পদক্ষেপ নিচ্ছে। ১৪৪ ধারা জারির পথে হাঁটতে চলেছে হাওড়া জেলা প্রশাসন।
এদিকে, শুক্রবার এর নেপথ্যে জঙ্গিগোষ্ঠীর যোগসাজশের অভিযোগ তুলে কলকাতা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হল। ঘটনায় বড়সড় ষড়যন্ত্র রয়েছে, অভিযোগ তুলে NIA তদন্তের আবেদন জানানো হয়েছে। হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির এজলাসে দায়ের হয়েছে মামলা।
এদিন হাইকোর্টে এই সংক্রান্ত মামলা দায়ের করতে গিয়ে মামলাকারী দেবদত্ত মাঝি জানান, অবরোধের ঘটনার পিছনে কোনও জঙ্গিগোষ্ঠীর মদত থাকতে পারে। আগামী দিনে বড়সড় হামলার ছক করা হতে পারে। নাহলে দিল্লির ঘটনায় এখানে দীর্ঘক্ষণ ধরে অবরোধ চালানো হল কেন? যারা অবরোধ চালিয়েছেন, তারা কোনও সাধারণ মানুষ নয়। এর পিছনে বৈদেশিক আল-কায়দা সমর্থিত দেশগুলির মদত থাকতে পারে বলে মনে করছেন মামলাকারী।
বিজেপি নেতানেত্রীদের ইসলাম বিদ্বেষী মন্তব্যের রেশ দিল্লি থেকে ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশে। বাংলাও তার আঁচ থেকে রেহাই পায়নি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে হাওড়া লাগোয়া ৬ নং জাতীয় সড়কের বিভিন্ন জায়গায় অবরোধ করেন প্রতিবাদীরা। টানা দিনভর অবরোধের জেরে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। চূড়ান্ত ভোগান্তির শিকার হন যাত্রীরা। এসব খবর পৌঁছয় নবান্নে। সঙ্গে সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠকে হাতজোড় করে অবরোধ প্রত্যাহারের আবেদন জানান। বলেন, ”আন্দোলন, প্রতিবাদ করতে হলে দিল্লিতে যান, এখানে দয়া করে রাস্তা অবরোধ করবেন না।” তারপর রাত ১১ টা নাগাদ অবরোধ ওঠে।
কিন্তু শুক্রবার সকাল থেকে ফের অবরোধ হয় উলুবেড়িয়ার, ধুলাগড়-সহ বিভিন্ন জায়গায়। পাশাপাশি শুরু হয় রেল অবরোধ। বম্বে রোডের কুলগাছিয়া, পীরতলায় অবরোধের জেরে আটকে পড়ে বহু গাড়ি। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলেই পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা ছোঁড়া হয়েছে বলে অভিযোগ। পুলিশও পালটা লাঠিচার্জ করে। নিমদিঘি এলাকা কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। দুপুর ২টো থেকে দফায় দফায় অবরোধে আটকে পড়ে যাত্রীবাহী গাড়ি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে। পালটা অবরোধকারীরাও সংঘর্ষে জড়ায়। নরেন্দ্র মোড়ে পুলিশের একটি কিয়স্কে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
এদিকে, রেলপথেও অবরোধ করা হয়। বাগনান, ফুলেশ্বর, চেঙ্গাইল-সহ একাধিক স্টেশনে দাঁড়িয়ে দূরপাল্লার ও লোকাল ট্রেন। জরুরি কাজে আটকে পড়েছেন অনেকেই। কতক্ষণে অবরোধ উঠবে, তা বুঝতে না পেরে দিশেহারা তাঁরা। সূত্রের খবর, শিগগিরই ১৪৪ ধারা জারি করতে পারেন হাওড়ার জেলাশাসক।
Be the first to comment