সিবিআইয়ের উপর আর ভরসা রাখতে পারছেন না কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সিবিআই তদন্তে যে শেষ পর্যন্ত কাজের কাজ কিছু হবে না, সেই উপলব্ধিও মঙ্গলবার বেরিয়ে এল বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের কথাবার্তায়। এদিন এজলাসে প্রবীণ আইনজীবী তথা তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথোপকথনে সিবিআই সম্পর্কে তাঁর উপলব্ধির কথা জানিয়ে দিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিতে দিতে আমি ক্লান্ত। জানি, সিবিআই করে কিছুই হবে না। সেই নোবেল প্রাইজের হালই হবে। তাঁর মতে, সিবিআইয়ের থেকে রাজ্য পুলিসের সিটই ভালো। এখানে অনেক ভালো অফিসার আছেন।
স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় একের পর এক সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তা নিয়ে আদালতের অন্দরে যেমন বিতর্ক হয়েছে, তেমনি শাসকদলও সমালোচনায় মুখর হয়েছে। একাধিক মামলার ক্ষেত্রে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সিবিআই তদন্তের নির্দেশের উপর ডিভিশন বেঞ্চের উপর স্থগিতাদেশও দিয়েছে। তা নিয়ে তিনি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এন ভি রমনাকে চিঠিও দিয়েছেন। সেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সিবিআই সম্পর্কে হতাশা প্রকাশকে আইনজীবী মহল বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। বিরোধী নেতারা আবার এর পিছনে ‘অন্য রাজনীতিরও’ গন্ধ পাচ্ছেন।
এজলাসে এদিন বিচারপতি বলেন, আজ সকাল থেকে আমার খুব ক্লান্ত লাগছিল। কত সিবিআই হবে? এক ডজন, দু ডজন? আমি নভেম্বর মাসে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। আজ পর্যন্ত তার কোনও ফল আসেনি। আমি কোনও আলো দেখতে পারছি না।
আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়: গতকালও আপনি সিবিআই দিয়েছেন। আজ পর্যন্ত সারদা-নারদে সিবিআই কিছুই করতে পারেনি।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়: হ্যাঁ সিবিআই দিয়েছি ঠিকই। কিন্তু কী হবে জানি না।
আইনজীবী: পার্থ চট্টোপাধ্যায় একজন ভালো মানুষ।
বিচারপতি: জানি। দুর্নীতির পিছনে উনি নেই। অন্য কোনও ব্যক্তি আছে। আমি জানি উনি ভালো মানুষ। শুধু খেতে খুব ভালোবাসেন। আমি পার্থ চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে কিছু বলেছি। সেটা তুলে নিতে আমার কোনও ইগো নেই। আপনি এটা বলে দেবেন। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমি যে কৃতজ্ঞ, সেটাও আমি খোলাখুলিই বলেছি।
আইনজীবী: অবশ্যই আমি বলে দেব। আমি পার্থর জন্য আছি। আর কারও জন্য নেই। কারণ আমি বহিরাগত।
বিচারপতি: মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কোনও বার্তা পৌঁছেছে কি না, তা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। তবে পরিস্থিতি খুব খারাপ। সংবাদমাধ্যমে আমার ছবি ছাপা হলে আমার কী। কর্মহীনদের কি চাকরি হবে? আমি তো ভাবছিলাম সিবিআইয়ের কাছ থেকে তদন্ত ফিরিয়ে নেব। আমি চাই স্বচ্ছ নিয়োগ হোক। আমি কাদের জন্য চেষ্টা করছি? এই দেশের কিছু হবে না। বিচার ব্যবস্থার উপর মানুষের যে আশা আছে, তা কি পূরণ হচ্ছে? আপনি কী বলেন?
আইনজীবী: একদমই না। প্রচুর মামলা জমে আছে।
বিচারপতি: হাইকোর্টে আর তিন-চার জন বিচারপতি এলে বসার জায়গা দেওয়া যাবে না। এখনও ১২ জন সার্ভিস বিচারপতি পেন্ডিং আছে। কলকাতা হাইকোর্টে বহু ভালো লোক আছে। তাদের কাজে না লাগালে খুব খারাপ হবে।
Be the first to comment