রাজ্য বিজেপির চূড়ান্ত ডামাডোলের মধ্যেই রবিবার নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন এই রাজ্যের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেনন। হেস্টিংসয়ের অফিসে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। বিজেপি সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে থাকতে বলা হয়েছে বিক্ষুব্ধ কয়েকজন নেতাকেও। এছাড়া দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার-সহ ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর নেতারাও থাকবেন। প্রয়োজন হলে অরবিন্দ মেনন বিক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গে আলাদা করেও কতা বলতে পারেন বলে দলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে। বিধানসভা ভোটের পর এই প্রথম রাজ্যে আসছেন তিনি।
বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর থেকেই রাজ্য বিজেপিতে কোন্দল তীব্র আকার নিয়েছে। যে যখন সুযোগ পাচ্ছেন, তখনই বিরোধী গোষ্ঠীর নেতাদের সমালোচনা করতে ছাড়ছেন না। প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ খুল্লমখুল্লাই সুকান্ত-সহ ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর নেতাদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে চলছিলেন। রাজ্য নেতৃত্বের তরফ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে দিল্লিতেও নালিশ ঠোকা হয়েছে। তারপরই তাঁর মুখে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব লাগাম পরানোর জন্য রীতিমতো বিবৃতি জারি করেছে। তাঁকে সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে নিষেধ করা হয়েছে। ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নেতৃত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে করা তাঁর সমালোচনামূলক মন্তব্যকে ভালোভাবে নিচ্ছে না কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাই ভবিষ্যতে তিনি যেন নিজেকে সংযত রাখেন এবং বেফাঁস মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন।
দিলীপ ঘোষকে পশ্চিমবঙ্গের বাইরে আটটি রাজ্যের সংগঠন দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। রাজ্য বিজেপিতে তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর নেতাদের দাবি, এই রাজ্য থেকে দূরে রাখার জন্যই দিলীপকে ভিন রাজ্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এরপরেও অবশ্য দিলীপ নিয়মিত সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মুখ খুলে চলেছেন।
ভোটের আগে রাজ্য নেতৃত্বকে দূরে সরিয়ে রেখেই প্রার্থী নির্বাচন থেকে শুরু করে প্রচার পর্যন্ত যাবতীয় দায়দায়িত্ব এবার কেন্দ্রীয় নেতারাই নিয়েছিলেন। তার অগ্রভাগে ছিলেন এই অরবিন্দ মেনন। রাজ্য নেতৃত্বের আপত্তি অগ্রাহ্য করেই ভোটের আগে কেন্দ্রীয় নেতারা তৃণমূল ভাঙিয়ে অনেক নেতা মন্ত্রীকে বিজেপিতে নিয়ে আসেন। কিন্তু ভোটে ভরাডুবির পরই সেই নেতারা আবার পুরনো দলে ফিরে গিয়েছেন। তা নিয়েও অরবিন্দদের বিরুদ্ধে সমালোচনার সুর চড়িয়েছিলেন দিলীপ-সহ একাধিক রাজ্য নেতা। সমালোচনা করেছিলেন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথাগত রায়ও।
অবশ্য তাঁর নিশানায় ছিলেন দিলীপ ঘোষও। সব মিলিয়ে রাজ্য বিজেপিতে এখনও কোন্দল থামার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। কদিন আগেই দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা কলকাতায় এসে নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে বলেছিলেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও কলকাতায় এসে বলে যান, রাজ্য বিজেপির ইচ্ছে মতো একটা নির্বাচিত সরকারকে ফেলে দেওয়াটা কোনও কাজের কথা নয়। সংগঠনকে শক্তিশালী করে তৃণমূলকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে। এখন দেখার, অরবিন্দ মেনন এসে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামাল দিতে কী দাওয়াই দেন।
Be the first to comment