বিজেপির বহিষ্কৃত নেত্রী নূপুর শর্মাকে কড়া ভাষায় ভর্ৎসনা করল সুপ্রিম কোর্ট। গোটা দেশের কাছে উনি ক্ষমা চান বলে মন্তব্য শীর্ষ আদালতের। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, সারা দেশ যে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল, তার জন্য নূপুরই একমাত্র দায়ী। নূপুর তাঁর বিরুদ্ধে করা সমস্ত এফআইআর দিল্লিতে স্থানান্তরের আবেদন জানান সুপ্রিম কোর্টে। সুপ্রিম কোর্ট ওই আবেদন প্রত্যাহার করে নিতে বলেছে নূপুরকে।
পয়গম্বর সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করে ইতিমধ্যেই সারা দেশে খলনায়িকার ভূমিকায় পর্যবসিত হয়েছেন বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র নূপুর। তাঁর ওই মন্তব্য ঘিরে শুধু দেশে নয়, বিদেশেও মুখ পুড়েছে শাসক দলের। নানা বিশৃঙ্খলা-অশান্তি হয়েছে দেশে। পশ্চিম এশিয়ার ইসলামিক রাষ্ট্রগুলিতেও নূপুরের ওই বিতর্কিত মন্তব্যের প্রভাব পড়েছে ব্যাপকভাবে। একাধিক দেশ ভারতীয় কূটনীতিকদের রীতিমতো তলব করে এই ঘটনার নিন্দা করেছে।
নূপুরের বিরুদ্ধে ভারত জুড়ে অসংখ্য এফআইআর হয়েছে। তিনি ওই সমস্ত এফআইআর দিল্লিতে স্থানান্তরের জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন। একই সঙ্গে জানানো হয় তিনি নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। এ বিষয়ে শুক্রবার শীর্ষ আদালতে তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়েন নূপুরের আইনজীবী। বিচারপতি সূর্যকান্ত প্রশ্ন তোলেন, নূপুর নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন, না তিনি দেশের নিরাপত্তার কারণ হয়ে উঠেছেন? আগে এই প্রশ্নের মীমাংসা করতে হবে। বিচারপতি বলেন, আমি ভাবতেই পারছি না, একজন আইনজীবী হয়ে ওই নেত্রী কীভাবে পয়গম্বর সম্পর্কে এই ধরনের মন্তব্য করলেন।
শীর্ষ আদালত বলেছে, দেশে যে আগুন জ্বলেছে কয়েকদিন ধরে, তার জন্য এককভাবে দায়ী ওই মহিলা। তাঁর ওই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে চারিত্রিক ঔদ্ধত্যের প্রকাশ ঘটেছে। বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেন, তিনি একটি রাজনৈতিক দলের মুখপাত্র হতে পারেন। তাতে কী এসে যায়? ওই মহিলা ভেবেছেন, তাঁর মাথার উপর রাষ্ট্রশক্তির আশীর্বাদ আছে বলে তিনি যা খুশি তাই মন্তব্য করতে পারেন আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করেই।বিচারপতি বলেন, ওই মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু তাঁকে কেউ ছোঁয়ার সাহস দেখাতে পারেনি। এতেই বোঝা যায়, তিনি কতটা প্রভাবশালী।
নূপুরের আইনজীবী যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেন, একটি টিভি চ্যানেলে বিতর্ক চলাকালীন তাঁর মক্কেল অ্যাঙ্কারের একটি প্রশ্নের জবাব দিয়েছিল। ওই যুক্তির জবাবে আদালত বলে, তাহলে তো উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধেই মামলা করা উচিত ছিল। সেটাই বা হয়নি কেন। পাল্টা নূপুরের আইনজীবী বলেন, এই ব্যাপারে দেশের নাগরিকদের কিছু বলার অধিকার নেই। তাতে আরও ক্রুদ্ধ হন বিচারপতি সূর্যকান্ত। গণতন্ত্রে যে কোনও মানুষের কথা বলার অধিকার আছে। গণতন্ত্রে যেমন ঘাসের বেড়ে ওঠার অধিকার আছে, ঠিক তেমনিই একটি গাধারও সেই ঘাষ খাওয়ার অধিকার আছে।
Be the first to comment