রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরেই সুর মেলালেন বিরোধীদের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী যশবন্ত সিনহা। আগে জানা থাকলে এনডিএ’র রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুকেই সর্বসম্মতিক্রমে প্রার্থী করা যেতে পারত বলেই মত তাঁর। যশবন্ত সিনহার এই মন্তব্য নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই জল্পনা তুঙ্গে। বিরোধী ঐক্য কি তবে ‘দুর্বল’ হয়ে পড়ছে, প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলের।
রাইসিনা হিলসের পরবর্তী বাসিন্দা বেছে নিতে দুই শিবির দুই প্রার্থীকে মনোনীত করেছে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ শিবিরের প্রার্থী পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি দ্রৌপদী মুর্মু । শিক্ষকতা ছাড়াও একাধিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। ছিলেন ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপালও। আর ১৭ বিরোধী দলের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে মনোনীত অভিজ্ঞ রাজনীতিক, প্রাক্তন মন্ত্রী যশবন্ত সিনহা। প্রসঙ্গত, যশবন্ত বিজেপিতেই ছিলেন দীর্ঘদিন। ২০১৯ সালে বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ। ২০২১ সালে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। তবে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হওয়ার পর তৃণমূলের সমস্ত পদ ছেড়ে দেন। তাঁর হয়ে জোরকদমেই প্রচারে নেমেছে তৃণমূল-সহ বিজেপি বিরোধী দলগুলি।
এদিকে, দ্রৌপদী মুর্মুকে ভোটদানের আরজি জানিয়ে বাংলার সাংসদদের চিঠি দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী এবং বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। চিঠির বয়ান নিয়ে হইচই কম হয়নি। বর্ষীয়ান তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় শুভেন্দুকে খোঁচা দিতেও ছাড়েননি।
যদিও রথযাত্রার দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এনডিএ’র রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেন। বলেছিলেন, “বিজেপি আগে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর নাম জানায়নি আমাদের। দ্রৌপদী মুর্মুর নাম জানলে ভেবে দেখতাম। উনি পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। তাঁর জয়ের সম্ভাবনা বেশি।” রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত, সময়মতো জানলে দ্রৌপদী মুর্মুকে সমর্থন করতে মমতার হয়তো আপত্তি থাকত না। সেক্ষেত্রে বিরোধীরা আলাদা প্রার্থী না-ও দিতে পারত। যশবন্ত সিনহাকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করার নেপথ্যে সবচেয়ে বেশি উদ্যোগ ছিল তৃণমূলেরই। বাকি বিরোধী দলগুলি তৃণমূল নেত্রীর পরামর্শ গ্রহণ করে প্রার্থী নিয়ে সর্বসম্মত হন।
সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন জানিয়ে যশবন্ত সিনহা বলেন, “আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন করছি। রাষ্ট্রপতি পদের জন্য সর্বসম্মতভাবেই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা যেতে পারত। আমি অতীতেও বলেছি রাষ্ট্রপতি পদের জন্য নির্বাচন হওয়া উচিত নয়। সর্বসম্মতভাবে রাষ্ট্রপতি বেছে নেওয়া উচিত। সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদের জন্য নির্বাচনের দায় পুরোপুরিভাবে শাসকদলের।” বিরোধীদের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী যশবন্ত সিনহার মন্তব্যে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তবে কি বিরোধী ঐক্য ‘দুর্বল’ হচ্ছে? আর এই প্রশ্ন নিয়েই চলছে জোর আলোচনা।
এছাড়াও যশবন্ত সিনহা নুপূর শর্মার পয়গম্বর বিতর্ক নিয়ে বিজেপি সরকারকে তোপ দাগেন। তাঁর মতে, “এই ধরনের বিতর্কিত মন্তব্য পরিকল্পনামাফিক করা হয়েছে। যাতে দেশজুড়ে অশান্তির বাতাবরণ তৈরি করা যায়। আর খুব সহজেই ভোট আদায় করা যায়।”
Be the first to comment