পশ্চিমবঙ্গ টেলি অ্যাকাডেমি আজ বাংলা টেলিভিশনের কলাকুশলী এবং টেকনিশিয়ানদের পুরস্কার সম্মান প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের সূচনা করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই রাজ্যের দুই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং ইন্দ্রনীল সেন মুখ্যমন্ত্রীকে উত্তরীয় এবং পুষ্পস্তবক দিয়ে সম্বর্ধনা জানান। উপস্থিত ছিলেন আর্টিস্ট ফোরামের পক্ষ থেকে সম্পাদক অভিনেতা শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় ও কার্যনির্বাহী সদস্য রানা মিত্র। ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ান্স অন ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার তরফ থেকে স্বরূপ বিশ্বাসও সংবর্ধনা দেন মুখ্যমন্ত্রীকে। সাহেব চট্টোপাধ্যায় ও জুন মালিয়া অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
২০১৪ সাল থেকেই অনুষ্ঠান শুরু হয়। এই বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে ৬১ টি ক্যাটাগরিতে ৬৬ জনকে সম্মান জানানো হয়। প্রথাগত পুরস্কারের পাশে এ বছর আজীবন স্বীকৃতি ও মরণোত্তর স্বীকৃতি পুরস্কার প্রদান করা হয়।মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে শিল্পী এবং কলাকুশলীদের সব ধরনের পরিচর্যা এবং বিমার দিকে নজর দেওয়ার পাশাপাশি তৈরি হয়েছে ভারতের মধ্যে প্রথম টেলি অ্যাকাডেমি ভবন। ফ্লোর তৈরির পাশাপাশি এখানে পঠন-পাঠনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এই সবটাই হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে আর তাই এদিন টেলি অ্যাকাডেমির তরফে মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।
প্রদীপ প্রজননের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করে মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, এই বাংলা, ভাষার দিক থেকে ক্যাপিটাল অফ ওয়ার্ল্ড। সংস্কৃতি রাজধানী মানে সবার আগে উঠে আসে বাংলার নাম। তিনি বলেন, এই বাংলায় আমাদের টেলি থেকে শুরু করে সাহিত্য, যাত্রা, নাট্য, চারুকলা শিল্প – সব ক্ষেত্রেই অ্যাকাডেমি রয়েছে। আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাকে আরও বেশি করে উজ্জীবিত করা এবং তাকে যতদূর সম্ভব প্রসারিত করা। তিনি মনে করিয়ে দেন যে, সভ্যতা আর সংস্কৃতি ছাড়া কোনও জাতির মেরুদন্ড তৈরি হতে পারে না। নবজাগরণ থেকে শুরু করে স্বাধীনতা আন্দোলন সব ক্ষেত্রেই পশ্চিমবঙ্গ মেরুদন্ড। টেলিভিশন নির্মাতাদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা লোকশিল্পী সহ বাংলার নানা সংস্কৃতিকেও যাতে সিরিয়ালে তুলে ধরা যায় সেদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি বাংলার শিল্পীদের অভিনয় গুণে তাঁরা আজ মুম্বইতে কাজ পাচ্ছে এই কথাও শোনা যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে। বাংলা এবং বাঙালির সাফল্যের প্রসঙ্গেই ইসরোর চন্দ্রযান ৩-টিমের কথা উল্লেখ করে বাংলার ১২ জনের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী। জলপাইগুড়িতে পড়াশোনা করা ছাত্র থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক, যাঁরা ইসরোতে এই মুহূর্তে সফলভাবে কাজ করছেন তাঁদেরও শুভেচ্ছা জানান মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি মনে করি টেলিভিশন চ্যানেল মানুষের মনের দরজা। কারণ টেলিভিশনের মাধ্যমেই আপনারা মানুষকে বর্তমান সময়ের নানা বিষয় সম্পর্কে অবগত করার পাশাপাশি প্রাণবন্ত করে তোলেন। মানুষের মনের জাগরণ তৈরি করেন।” বিশ্বের মানুষ আজকে বাংলার বিনোদন চ্যানেলের দিকে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলেও এদিন নিজের বক্তব্যে তুলে ধরেন মমতা। তিনি বলেন, টেলিভিশনে অনেক সময় নানা ধরনের ক্রাইম দেখানো হয়। এতে কখনও কখনও মানুষ ভুল পথে চালিত হতে পারে। টেলিভিশন নির্মাতাদের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ যে এরকম কোনও ঘটনা দেখানোর পাশাপাশি এর বিরুদ্ধে প্রশাসনের পদক্ষেপের কথাও যাতে মানুষের চোখ এবং কান পর্যন্ত পৌঁছয়,সেই সম্পর্কে দায়িত্বশীল হতে হবে। নিজের ব্যস্ততার ফাঁকে বিভিন্ন সিরিয়াল দেখে কীভাবে আনন্দ পান সে কথাও মজার ছলে এদিন বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সবশেষে “বাংলা টেলিভিশন একদিন বিশ্ব জয় করবে” এই কামনা করে টেলিভিশনের সকল কলাকুশলীকে শুভেচ্ছা জানান বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
Be the first to comment