চিরন্তন ব্যানার্জি:-
আড্ডায় আছে কফি হাউস। বাঙালির প্রেমে কিংবা প্রেম ভেঙে যাওয়ার দুঃখে আছে কফি হাউস। দশকের পর দশক ধরে বিপ্লবের আঁতুরঘর। কলকাতা তৎসহ গোটা বাংলার ‘যুবকেন্দ্র’। বয়সে নয়, চেতনায়। সিগারেট আর কফির গন্ধেও বিপ্লবের ফ্লেভার। সুনীল, শক্তি, বিনয়, উৎপলের সেই আড্ডাঘর, অসংখ্য লিটল ম্যাগাজিনের জন্ম-মৃত্যুর সাক্ষী কফি হাউজে আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়বে না, তা কি হতে পারে! এবার আরজি কর কাণ্ডে আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে গেল কফি হাউসের নাম। কফি হাউসের প্রতিটি টেবিলে জ্বলল মোমবাতি। গাওয়া হল প্রতিবাদের গান। গাওয়া হল জাতীয় সংগীত। উঠে দাঁড়ালেন সকলে। কফি হাউস ফের জানিয়ে দিল হারিয়ে যায়নি কলকাতা। কফি হাউস আছে কফি হাউসেই।
গোটা বিশ্ব যখন আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে রাস্তায় নামছে, তখন ফের চেনা ছন্দে ফিরল কফি হাউস। কফি হাউসে অনেকেই আসেন স্রেফ আড্ডা দিতে। তবে আরজি কর কাণ্ড কার্যত সব কিছু ওলটপালট করে দিয়েছে। কফি হাউসে প্রতিটি টেবিলে মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়। সেই সময় কফি হাউসে উপস্থিত অনেকেই এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শামিল হন। কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দলের তরফে নয়। তবে অরাজনৈতিকভাবে বহু মানুষ এদিন কফি হাউসের এই কর্মসূচিতে শামিল হয়েছিলেন।
সোমবার ঠিক বিকেল ৬টায় কফি হাউজের সব আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়। তারপর টেবিলে টেবিলে জ্বালানো হয় মোমবাতি। একই সঙ্গে স্লোগান ওঠে, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘জাস্টিস ফর আরজি কর’। স্লোগান শেষে সবাই একসঙ্গে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে এই কর্মসূচি শেষ করেন। কফি হাউজের দোতলার সিঁড়িতে ওঠার পর, গেটের ঠিক পাশে একটি টেবিলও রাখা ছিল। তাতে রাখা একটি কাপ ঘিরে কয়েকটি মোমবাতি দিয়ে সাজানো হয়। এছাড়া কফি হাউসের কাউন্টার, নিচের দোকানে এবং আরও বিভিন্ন জায়গাতেও মোমবাতি জ্বালানো হয়েছিল।
এক অন্যরকম প্রতিবাদ ফের দেখল কফি হাউস। কোথাও কোনও রাজনৈতিক দলের পতাকা ছিল না। একেবারে অরাজনৈতিক দলের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শামিল হল কফি হাউস।
Be the first to comment