রোজদিন ডেস্ক:-
টানা ৪১ দিন পর অবশেষে কাজে ফিরছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। নবান্নর তরফে অধিকাংশ দাবি মেনে নেওয়ায় ধর্না প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা।
বৃহস্পতিবার রাতে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে সাংবাদিক বৈঠক থেকে আন্দোলরত পড়ুয়ারা জানান, শুক্রবার দুপুরে স্বাস্থ্যভবনের সামনে থেকে সিবিআই দফতর পর্যন্ত মিছিল করার পর ধর্না প্রত্যাহার করা হবে। সিজিওতে সিবিআই দফতরের সামনে দ্রুত বিচারের দাবি জানানো হবে। এরপর শনিবার থেকে হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজের কাজে যোগ দেবেন তাঁরা। পাশাপাশি আন্দোলনকারীরা জানান, ন্যায় বিচারের দাবিতে লড়াইও চলবে। শনিবার থেকে শুধুমাত্র জরুরি পরিষেবার কাজে যোগ দেবেন তাঁরা। আংশিক কর্মবিরতি চলবে।’’ তবে প্রয়োজনে আবার পূর্ণ কর্মবিরতিতে ফিরতে পারেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।
টানা ৪১ দিনের আন্দোলনের ফলে রাজ্যে কী কী দাবি মানতে বাধ্য হয়েছে তা বিস্তারিতভাবে পড়ে শোনান আন্দোলনকারীরা। তাঁদের কথায়, “আমরা টানা রাস্তায় বসে থেকে লড়েছি বলেই এই দাবিগুলি পূরণ হল। এটা আমাদের আংশিক জয়। তবে নির্যাতিতার বিচার না হওয়া পর্যন্ত এই লড়াই চলবে। আমরা চাই না, আর একটাও অভয়া কাণ্ড ঘটুক।”
পাশাপাশি এদিন চিকিৎসকেরা বলেন, দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন বন্যা কবলিত এলাকায় অভয়া ক্লিনিক ক্যাম্প করবেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। শুক্রবার থেকেই পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা করবেন তাঁরা।
প্রসঙ্গত, গত ৮ আগস্ট, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের নাইট শিফট ছিল। পরদিন ওই হাসপাতালের সেমিনার হল থেকে তাঁর প্রায় বিবস্ত্র দেহ উদ্ধার হয়। অভিযোগ, ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে। সুবিচারের দাবিতে গত ১২ আগস্ট থেকে কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। সেই মতো বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টানা ৪১ দিন ধরে চলছে কর্মবিরতি। প্রথমে আর জি কর হাসপাতালের সামনে ধরনায় বসেন তাঁরা। তবে গত ১০ দিন যাবৎ স্বাস্থ্যভবনের সামনে ধরনায় শামিল আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকরা। ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত এই ঘটনার জল গড়ায়। সর্বোচ্চ আদালতের তরফেও বার বার আন্দোলনরত চিকিৎসকদের কাজে ফেরার আর্জি জানানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁদের কাজে ফেরার কথা বলেন। তবে নিজেদের পাঁচ দফা দাবিতে অনড় ছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। একাধিকবার টালবাহানার পর গত ১৬ সেপ্টেম্বর, সোমবার রাতে কালীঘাটের বাসভবনে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকও করেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। ওই রাতে প্রায় ঘণ্টাদুয়েকের বৈঠকের পর জুনিয়র চিকিৎসকদের পাঁচ দফা দাবির প্রায় সিংহভাগই মেনে নেয় রাজ্য সরকার। তবে এখনও স্বাস্থ্যসচিবকে কেন অপসারণ করা হল না, তা নিয়ে টানাপোড়েন চলতে থাকে। মঙ্গলবারের জিবি মিটিংয়ের পর তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন কোনওভাবেই কর্মবিরতি প্রত্যাহার করবেন না। এর পর বুধবার সকালে ফের তাঁরা মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকে বসার ইচ্ছাপ্রকাশ করে ই-মেল পাঠান। মুখ্যসচিব সেই প্রস্তাবে রাজি হন। সেই মতো নবান্নে প্রায় ঘণ্টাদুয়েক বৈঠকও করেন তাঁরা। বৈঠক শেষে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের ৪ এবং ৫ নম্বর দাবিও মেনে নেন মুখ্যসচিব। তবে তার পরেও কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হঠেননি আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা। বৃহস্পতিবার ফের জিবি মিটিং করেন তাঁরা। ওই বৈঠকের পরই কাটল জটিলতা। অবশেষে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা।
Be the first to comment