ফিরলো কেষ্ট, বীরভূম গেলেন মমতাও, কিন্তু তাঁর নাম মুখেও আনলেন না, খোঁজও নিলেন না

Spread the love

 

রোজদিন ডেস্ক:-

হিন্দি বলয়ে নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে আগে একটা স্লোগান খুব চলত—‘দেখো দেখো কৌন আয়া! গুজরাত কা শের আয়া!’ অনুব্রত মণ্ডলকে তেমনই বাঘ বলে একদা বর্ণনা করেছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। গরু পাচার মামলায় তখন সদ্য গ্রেফতার হয়েছেন অনুব্রত। বীরভূমে সংগঠনের মনোবল চাঙ্গা রাখতে ববিকে পাঠিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ আঠারো মাস পর মঙ্গলবার এহেন ‘শের’ যখন বীরভূমে ফিরলেন তাঁর নাম একবারও মুখে আনলেন না মুখ্যমন্ত্রী। ঘটনাচক্রে এদিন বীরভূমে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু প্রশাসনিক বৈঠকের মঞ্চে তো নয়ই, এমনকি জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ঘরোয়া ভাবেও কেষ্ট মণ্ডলের কথা একবারও তোলেননি মুখ্যমন্ত্রী।

তিহাড় থেকে ফিরে অনুব্রত যখন এদিন নিচুপট্টির বাড়িতে ঢোকেন দেখা যায়, তাঁর অনুগামীরা ঢাকঢোল পেটাচ্ছেন। গাঁদাফুলের পাপড়ি উড়ে পড়ছে তাঁর মাথায়। সাংবাদিকদের বাড়িয়ে দেওয়া বুমের সামনে মুখ এনে এর পর অনুব্রত বলেন, আমি দিদিকে ভালবাসি। দিদিকে গোটা বাংলা ভালবাসে। দেশ ভালবাসে।
অনুব্রতর ব্যাপারে বরাবর স্নেহশীল ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কিন্তু এদিন কেষ্টর ব্যাপারে তাঁর নীরবতা অনেকেরই নজর কেড়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই নীরবতার কারণ পড়ে ফেলার চেষ্টা করছেন দল ও সরকারের অনেকেই। পরে সন্ধেয় কালীঘাটের ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতা এদিন বলেন, এমন নয় যে দিদি এদিন অনুব্রতর কথা মুখে আনলেন না মানে এর পর কেষ্টর সঙ্গে ওঁর আর কথা হবে না। তবে হ্যাঁ কতগুলো বিষয় পর পর সাজিয়ে দেখতে হবে। এক, অনুব্রতর উপর আস্থাশীল ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সিবিআই তদন্তে অনুব্রতর বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ উঠে এসেছে, তথা আয়ের অতিরিক্ত সম্পত্তি, জোর করে চাল কলের মালিকানা লিখিয়ে নেওয়া, গরু পাচারের সঙ্গে যোগসাজস—এ সবের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও সতর্ক থাকা উচিত। কারণ, অনুব্রত জামিনে মুক্ত হয়েছেন মাত্র, নির্দোষ প্রমাণিত হননি। তা ছাড়া যে সব অভিযোগ সাদা কালোয় দেখা গিয়েছে তা বরদাস্ত করাও মুশকিল।
দুই, অনুব্রতকে জেলার একচ্ছত্র সাংগঠনিক ক্ষমতা দিয়ে রাখা হয়েছিল। দেখা যায়, তাঁর অনুপস্থিতি সত্ত্বেও পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে ভাল ফল করেছে তৃণমূল। সুতরাং আগের সমীকরণে ফেরা হবে কিনা তা বিবেচনা সাপেক্ষ।
তিন, বীরভূমের সাংগঠনিক বিষয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অনুব্রতকে আর কতটা গুরুত্ব দিতে চাইবেন সেই প্রশ্নও রয়েছে। কারণ, আর যে যাই বলুন অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁকে আর বীরের মর্যাদা দিতে চাননি অভিষেক।
চার, আরজি কর কাণ্ডের পর সরকারের কাছে একটা বার্তা পরিষ্কার। তা হল, শুধু আরজি করের ঘটনার জন্যই প্রতিবাদ হয়েছে তা নয়। সরকারের বিরুদ্ধে স্বাভাবিক প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা, এক শ্রেণির নেতার দুর্নীতি, থ্রেট কালচার, আচরণেও মানুষের মনে ক্ষোভ রয়েছে। একদা চড়াম চড়াম, গুড় বাতাসার মুখ বর্তমান পরিবেশে শুধু অচল পয়সা নয়, বড় বোঝা। তাই অনুব্রত বাড়ি ফিরলেন ঠিকই, কিন্তু তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্খায় তাঁর ওয়াপসি কতটা হবে তা এখনই বলা মুশকিল।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*