রোজদিন ডেস্ক :-
মঙ্গলবার দেড়শো বছরে পা দিল কলকাতার আলিপুর চিড়িয়াখানা। জন্মদিন উপলক্ষে উপহার দেওয়া হল নতুন ফটক। কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছেন, সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে চলতি বছর চিড়িয়াখানায় আনা হয়েছে আরও কিছু প্রাণী। রয়েছে একাধিক পরিকল্পনাও।
১৮৭৫ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর আলিপুরে তৈরি হয় চিড়িয়াখানা। অধিকর্তা শুভঙ্কর সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, চিড়িয়াখানায় এখন প্রাণীর সংখ্যা প্রায় ২,০০০। বছরে প্রায় ৩৮ লক্ষ পর্যটক আসেন এখানে। ৬ মাসে আগে নতুন কয়েকটি প্রাণী আনা হয়েছে। তার মধ্যে চারটি মাউস ডিয়ার, মালায়ান টাপির রয়েছে। এই মুহূর্তে ভারতের অন্য কোনও চিড়িয়াখানায় মালায়ান টাপির নেই। সার্ধশতবর্ষে ভোলবদল হয়েছে প্রধান ফটকের। প্রায় দোতলা সমান উঁচু ফটকের শীর্ষে থাকছে হাতির মাথার প্রতিকৃতি। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের সূত্রে জানা গিয়েছে, সাপ এবং পাখিদের খাঁচা নিয়েও বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল জু অথরিটির সদস্য সম্পাদক সৌরভ চৌধুরী জানিয়েছেন, সার্ধ শতবর্ষ উপলক্ষে সারা বছর ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি চলবে চিড়িয়াখানায়। রাজ্য বন দফতরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব মনোজ আগরওয়াল জানান, দেশে ১৬৬টি চিড়িয়াখানা রয়েছে। তার মধ্যে সেন্ট্রাল জু অথরিটির তালিকায় চার নম্বরে রয়েছে আলিপুর চিড়িয়াখানা। দার্জিলিঙের চিড়িয়াখানা দেশে এক নম্বরে। শেষ কয়েক বছরে আলিপুর চিড়িয়াখানায় ৩৪-৩৫ লক্ষ দর্শক এসেছে। এ বার এক নম্বরে উঠে আসার চেষ্টা করছে এই চিড়িয়াখানা।
পাশাপাশি দিনটিকে স্মরণে রেখে এবছর থেকেই চিড়িয়াখানার কর্মীদের জন্য বিশেষ বিমার ব্যবস্থা করছে রাজ্যের বনদফতর। অবসরকালীন সময়ে চিড়িয়াখানার প্রত্যেক কর্মীকে পাঁচ লাখ টাকার বিমা দেবে রাজ্য সরকার। মঙ্গলবার আলিপুর চিড়িয়াখানার দেড়শো বছরের অনুষ্ঠানে রাজ্যের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা বলেন, রাজ্যের প্রতিটি চিড়িয়াখানার কর্মীরা পাঁচ লাখ টাকা বিমা পাবেন ৷ আগামী অক্টোবর মাস থেকে এই প্রকল্প শুরু হবে ৷ আলিপুর চিড়িয়াখানার যে সমস্ত কর্মীরা পশু-পাখির খাঁচার ভিতর গিয়ে, তাঁদের লালন-পালন ও খাবার পরিবেশন করেন এবং অন্যান্য কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন, তাঁদের প্রত্যেকের এককালীন পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হবে৷ যদি, অন্যান্য বিমাও তিনি পেয়ে থাকেন, তা সত্ত্বেও অবসরকালীন সময়ে ওই কর্মী এই প্রকল্পের আওতায় পড়বেন৷”
এদিন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী তথা মেয়র ফিরহাদ হাকিম আজকের অনুষ্ঠানে এসেছিলেন ৷ ফিরহাদ বলেন, “বড় হয়ে মন খারাপ হলে আলিপুর চিড়িয়াখানায় আসা। ছোটবেলায় বাবা-মা’য়ের সঙ্গে চিড়িয়াখানায় আসা ৷ সত্যিকারের চিড়িয়াখানায় আনন্দ পেতে হলে বর্ষার সময় আসুন ৷ পশু-পাখিরা আমাদের ওয়েলকাম করে ৷ বুড়ো বয়সে চিড়িয়াখানায় আসার সুযোগ পেলে আনন্দ পাই ৷ ১৫০ বছর শুনলেই শিহরিত হই ৷ আমিও বহুবছর এই চিড়িয়াখানার সঙ্গে যুক্ত আছি ৷ এটা আনন্দের জায়গা ৷ কিন্তু, আমি ২০০ বছর দেখতে পাব না ৷”
চিড়িয়াখানার বেশ কিছু প্রাণীকে দত্তক নিয়েছেন বিরবাহা। তিনি জানিয়েছেন, আগামী দিনে এখানে আরও নতুন পশু-পাখি আনা হবে। তাঁর কথায়, ‘‘বন্যার কারণে আজ মুখ্যমন্ত্রী এখানে আসতে পারেননি। তাঁকে বন দফতরের তরফে ধন্যবাদ জানাই। বাবা-মা ভালবেসে নাম দিয়েছিলেন বিরবাহা। এই নামের অর্থ জঙ্গলের ফুল। মুখ্যমন্ত্রী আমার নাম সম্পূর্ণ করেছেন।’’ তাঁর আরও আর্জি, ‘‘পশু-পাখিকে ছবি তোলার জন্য ভাল না বেসে সত্যি ভালবাসুন।’’
চিড়িয়াখানার জন্মদিন উপলক্ষে মঙ্গলবার সেখানে উপস্থিত ছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, রাজ্যের বনমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা, আদি সপ্তগ্রামের বিধায়ক তপন দাশগুপ্ত, কলকাতার পুরসভার বোরো ৯-এর চেয়ারপার্সন দেবলীনা বিশ্বাস। বিরবাহা জানিয়েছেন, রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার কারণে উপস্থিত থাকতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
Be the first to comment