রোজদিন ডেস্ক :- ‘যেখানে জলের অপচয় হচ্ছে ডিএম, এসপি, বিডিও, পিডব্লিউডি, এগ্রিকালচার, সেচ দপ্তরের আধিকারিকরা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে সেই সব জায়গায় সারপ্রাইজ ভিজিট করুন। কেউ সমঝোতা করলে তাঁর আগে চাকরি খাব। পানীয় জলের অপব্যবহার করলে সরকার সেটা সহ্য করবেন না। আইন সবার জন্যেই এক।’ সোমবার বিধানসভায় পানীয় জলের অপচয় রুখতে কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নবান্নের পর সোমবার বিধানসভায় ছিল জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর নিয়ে আগের দিনের বৈঠকের রিভিউ বা পর্যালোচনা বৈঠক। সেই বৈঠক থেকেই একরাস ক্ষোভ প্রকাশ করে গ্রেফতারির নিদান দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
পাশাপাশি, যে সংস্থাগুলি টেন্ডার নেওয়ার পরেও পারফরম্যান্স করছে না, তাদের সরাসরি ব্ল্যাক লিস্ট করে পেনাল্টি ধার্য করার কথাও বললেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকের শুরুতেই মুখ্যসচিব এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীর সামনে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানিয়ে দেন। এরপর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এখনও পর্যন্ত সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অথবা সরকারি পাইপ লাইন কেটে দিয়ে জল ব্যবহারের মোট ৪৪৮টি অভিযোগ জমা পড়েছে ৷ ১৮,২৩০ জায়গায় দেখা যাচ্ছে সরকারের জল অপব্যবহার হয়েছে। এমন কাজ করা বেআইনি। এটা করলে ফৌজদারি মামলা হবে। প্রয়োজনে গ্রেফতার হবে।”
এদিন মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি জেলাশাসক, বিডিও, পুলিশ সুপারদের নিরপেক্ষভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর স্পষ্ট বার্তা, “কোনও নেতার কথা শুনবেন না। কোনও রাজনৈতিক দলের কথা শুনবেন না। কোনও পুলিশ কমপ্রোমাইজ করবেন না।” মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানান, দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর থেকে এভাবে জলের লাইনের অপব্যবহারের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে। আর সবচেয়ে কম অভিযোগ এসেছে কালিম্পং থেকে।
এদিন সরকারি আধিকারিকদের উদ্দেশেও কড়া বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ তাঁর কথায়, “এই ধরনের ঘটনায় কোনও সরকারি অফিসার সমঝোতা করলে, তাঁর চাকরি আগে যাবে। সরকার সহ্য করবে না। নিজের এলাকা দেখে অন্য এলাকা বঞ্চিত করলে। সরকার কড়া ব্যবস্থা নেবে।”
প্রসঙ্গত, জল জীবন মিশন প্রকল্পের আওতায় রাজ্যে গ্রামীণ প্রায় ১.৭৫ কোটি বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগ পৌঁছনোর কথা রয়েছে। এখনও পর্যন্ত তা পৌঁছেছে ৯৩.৫০ লক্ষ পরিবারে। ২০২৪ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও তা অথৈ জলে। এই অবস্থায় পানীয় জল সরবরাহের কাজের অগ্রগতি ও অভিযোগ নিয়ে রিভিউ মিটিং করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই ১৫৫ জন ঠিকাদার এবং ১৯ জন ইঞ্জিনিয়ারকে শোকজ করা হয়েছে।
এদিন কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপির বিরুদ্ধেও সমালোচনার সুর সোনা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর গলায়। সোমবার তিনি বলেন, “নির্বাচন আসলে ওরা বলে প্রত্যেক ঘরে জল ওরা দিয়েছে। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ, বিদ্যুৎ সংযোগ ও আনুষাঙ্গিক সমস্ত বিষয়ে দেখতে হয় রাজ্যকেই। বেশ কিছু কেন্দ্রীয় সংস্থার অসহযোগিতার কারণে রাজ্যে জল প্রকল্প ধাক্কা খাচ্ছে।” রেল, ইন্ডিয়ান অয়েল, এয়ারপোর্ট বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থা সঠিক সময়ে অনুমোদন না দেওয়ায় প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষের বাড়িতে জল পৌঁছনো যাচ্ছে না বলে অভিযোগও করেন তিনি। এরমধ্যে রেলওয়ের জন্য ১ লক্ষ ৩৪ হাজার পরিবার জল পাচ্ছে না। এনএইচ এর জন্য ১ লক্ষ ১৮ হাজার পরিবার জল পাচ্ছে না।
এদিনের এই বৈঠকে কোন সংস্থার কারণে কত পরিবারে জল পৌঁছানো যাচ্ছে না, তার একটা তালিকাও দেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কথা বলে যাতে এই সংস্থাগুলি থেকে দ্রুত অনুমোদন পাওয়া যায়, তার জন্য উদ্যোগ নিতে মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিয়েছেন, “বাড়ি বাড়ি ফেলে রাখা পাইপে যতক্ষণ না পর্যন্ত জল যাবে, ততক্ষণ নতুন জমি অধিগ্রহণ নয়। কারণ কোটি কোটি টাকা দিয়ে জমি কিনতে হয়। ভোটের আগে বলবে ঘর ঘর কা পানি। এদিকে আমাদের টাকা দিয়ে কাজ করতে হয়। কেউ যেন না ভাবে, রাজ্য সরকার তার কেনা সম্পত্তি ।” তিনি বলেন, “নিজেদের দোষ ত্রুটি ঢেকে ফেলুন। রাজ্যে ২৮ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক আছে । প্রয়োজনে তাদের কাজে লাগাও। স্থানীয় প্রশাসন মারফত এদের সঙ্গে যোগাযোগ করো। শ্রম দফতরকে এতে যুক্ত কর।”
উল্লেখ্য, এর আগে নবান্নের বৈঠক থেকে বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ পুনরায় রি-চেক করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপরই সামনে এসেছে ভয়াবহ এই তথ্য। এদিন বিধানসভায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কাজ থেকে পাওয়া সেই পরিসংখ্যান জনসমক্ষে তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে কাজে গাফিলতির অভিযোগে একাধিক ঠিকাদার, একাধিক ইঞ্জিনিয়রের বিরুদ্ধে আইনি পদেক্ষপ নেওয়ার কথাও জানান রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান।
Be the first to comment