প্রয়াত বাম আমলে হাওড়ার ‘দাপুটে’ তথা হাওড়ার প্রাক্তন সাংসদ ও মেয়র স্বদেশ চক্রবর্তী

Spread the love

রোজদিন ডেস্ক :- প্রয়াত হলেন হাওড়ার প্রাক্তন সাংসদ ও হাওড়া পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র স্বদেশ চক্রবর্তী৷ সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ হাওড়ার বাসভবনেই প্রয়াত হন তিনি। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। ১৯৪৩ সালের ২২ ডিসেম্বর বাংলাদেশের খুলনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন স্বদেশ চক্রবর্তী। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছিলেন প্রবীণ এই সিপিআইএম নেতা। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সহপাঠী ছিলেন তিনি।

১৯৬১ সালে ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে বাম রাজনীতির সংস্পর্শে এসেছিলেন স্বদেশ। সেই সময় পুলিশের হাতে ধরা পড়ে লালবাজার সেন্ট্রাল লকআপেও ছিলেন। রাজবন্দির জীবন কাটিয়েছেন প্রেসিডেন্সি জেলেও। এর পর ১৯৬৩ সালে সিপিএম পার্টির সদস্যপদ পান তিনি। ছ’বছর পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্যও ছিলেন। এ ছাড়া হাওড়া জেলা কমিটি ও জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন স্বদেশ। পরে দু’বার লোকসভা ভোটে হাওড়া সদর থেকে জিতেছিলেন। দু’বার হাওড়া পুরসভার মেয়রও হয়েছিলেন। এ ছাড়া হাওড়া ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট ও এইচআরবিসি-র চেয়ারম্যান পদেও ছিলেন প্রাক্তন সাংসদ। তাঁর পারিবারের সদস্যরা সিপিআইএম পার্টির সাথে যুক্ত। তাঁর স্ত্রী পুষ্প চক্রবর্তী ১৯৭১ সালে সিপিআইএম পার্টির সদস্য অর্জন করেন। তাঁর কন্যা ২০০৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত হাওড়া পুরসভার কাউন্সিলার হিসাবে কাজ করেছেন।
স্বদেশ চক্রবর্তীকে সরাসরি ছাত্র আন্দোলনে যাঁরা নিয়ে এসেছিলেন, তাঁরা প্রয়াত নন্দগোপাল ভট্টাচার্য ও রণজিৎ গুহ৷ ছাত্র আন্দোলনে হাওড়া জেলারই আদ্যনাথ ভট্টাচার্য, সুখরঞ্জন ভট্টাচার্য আর স্বদেশ চক্রবর্তী, বনানী বিশ্বাসরাও ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি সিপিআইএমের হাওড়া জেলা কমিটির সদস্য এবং ১৯৭৯ সালে তিনি পার্টির জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন। দীর্ঘ ছ’বছর স্বদেশ চক্রবর্তী পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য ছিলেন।
১৯৯৯ সালে তিনি প্রথম হাওড়া সদর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জিতে সাংসদ হন। ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি হাওড়া সদরের দুবারের সাংসদ ছিলেন। তাঁর আগে ১৮৮৯ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তিনি হাওড়া পৌরসভার মেয়র হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও হাওড়া ইনপ্রফমেন্ট ট্রাস্টের চেয়ারম্যান হিসাবে ১৯৮০ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও ২০০০ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি এইচ আর বি সি-র চেয়ারম্যান ছিলেন।
একদিকে সংশোধনবাদী রাজনীতির আক্রমণ, অপরদিকে চিনের দালাল বলে প্রতিক্রিয়াশীলদের শারীরিক আক্রমণ মোকাবিলা করেই তাঁর এগিয়ে যাওয়া। কলেজ গেটে গুন্ডাদের হাতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
৩৪ বছরের বাম জমানায় হাওড়া জেলায় ‘দাপুটে’ নেতা হিসাবেই পরিচিত ছিলেন তিনি। হাওড়া জেলাশাসক, পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে প্রশাসনের পদস্থ কর্তারা কেউ স্বদেশ বাবুকে না জানিয়ে কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতেন না। বলা হত স্বদেশের কথার ‘বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খেত’। তাঁর দাপটের কারণে বিরোধীরা হাওড়াকে বলত, ‘স্বদেশের দেশ’।
সেই সময় তাঁর বিরুদ্ধে বিরোধীদের ছাপ্পা, রিগিং, সন্ত্রাসসের ভুরি ভুরি অভিযোগ থাকলেও ব্যক্তি স্বদেশবাবুর বিরুদ্ধে কখনও টাকা পয়সা চুুরি করা বা সরকারি প্রকল্পে নয়ছয় করার অভিযোগ ওঠেনি। বদনাম কুড়িয়েছেন পার্টির জন্যই।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*