রোজদিন ডেস্ক :- তিনমাস আগে টলিপাড়ার স্টুডিওয় মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে বরফ গললেও মঙ্গলবার ফের অশনিসংকেত দেখা গেল অভিনেতা পরিচালকদের সাংবাদিক বৈঠকে। এদিনের বৈঠকে ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইর্স্টার্ন ইন্ডিয়া-র দাবি এখনও কোনো সমস্যার সমাধান হয়নি। ফের ফেডারেশনের কাজে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগ তুললেন অভিনেতা তথা পরিচালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়।
মাস তিনেক আগে পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়ের পুজোর ছবিকে কেন্দ্র করে টলিপাড়ার ফেডারেশন এবং পরিচালকদের মধ্যে এক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। সমস্যা প্রকট হলে পরিচালকেরা কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে পরিচালকেরা কাজে ফেরেন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে একটি কমিটি তৈরির কথা ছিল। সেই কমিটিতে থাকার কথা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, দেব, পরিচালক গৌতম ঘোষ এবং রাজ্যের দুই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও ইন্দ্রনীল সেনের। সেই কমিটির রিপোর্ট গত ৩০ নভেম্বরের মধ্যে জমা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার ডিএইআই (ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইর্স্টার্ন ইন্ডিয়া) কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠক করে অভিযোগ করে, এখনও পর্যন্ত সেই কমিটি তৈরি হয়নি। কোনো সমস্যার সমাধান হয়নি। সমস্যার সমাধানে তাঁরা এবার আইনের দ্বারস্থ হয়েছেন বলে জানান।
এদিন পরমব্রত বলেন, “বাইরের কাউকে দিয়ে কাজ করাতে বাধা দিচ্ছে ফেডারেশন। ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত না হলে কাজ করতে দেওয়া হয় না। ইন্ডাস্ট্রির কোনও নিয়ম তৈরির আইনি অধিকার নেই ট্রেড ইউনিয়নের। ছোট ইউনিট নিয়ে কাজ করতে দেওয়া হয় না। প্রয়োজন ছাড়াই প্রচুর লোক নিয়ে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। প্রত্যেক ফরম্যাটের জন্য টেকনিশিয়ানদের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে ফেডারেশন। প্রয়োজন না থাকলেও জোর করে টেকনিশিয়ানদের কাজে নিতে হচ্ছে”।
এদিন তিনি আরও বলেন, “টলিগঞ্জের স্টুডিও পাড়ায় এখন ‘গুপি শুটিং’ শব্দ বেশ প্রচলতি। এই শব্দের চল বিশ্বে কোথাও নেই। অথচ এখানে রয়েছে। একজন পরিচালক এবং প্রযোজক, নিজের পছন্দ মতো লোক নিয়ে কাজ করতে পারেন না। উল্টে ফেডারেশন যাঁদের বলবে, যতজন লোক বলবে ততজনকে নিয়ে কাজ করতে হবে। এই বিষয়টা বেআইনি। একজন পরিচালক এবং প্রযোজক নিজের পছন্দ মতো লোকজন নিয়ে শুটিং করবেন সেটাই স্বাভাবিক”।
এদিন পরিচালকেরা জানান, ফেডারেশন নিজের ইচ্ছে মতো ইন্ডাস্ট্রিতে ছুটি ঘোষণা করে। ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হয় ইউনিট। বুধবার শুরু হচ্ছে ৩০তম কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব। সেই উপলক্ষে ইন্ডাস্ট্রিতে ছুটি ঘোষণা করেছে ফেডারেশন। অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য নাম উল্লেখ না-করে বলেন, ‘‘আগামী কালের এই ছুটির ঘোষণা আমরা সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় জানতে পেরেছি। ফলে বুধবার আমার ৭০ জন শিল্পীকে নিয়ে শুটিং কী ভাবে হবে জানি না।’’
মঙ্গলবার বিকালে সাংবাদিক বৈঠকে পরিচালকদের তরফে উপস্থিত ছিলেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, সুদেষ্ণা রায় প্রমুখ। পরিচালকদের সংগঠনের সভাপতি সুব্রত সেন বলেন, ‘‘আমাদের তরফ থেকে ‘কম্পিটিশন কমিশন অফ ইন্ডিয়া’র কাছে মামলার সমস্ত কাগজপত্র আজ দিল্লিতে পাঠানো হয়েছে।’’
ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী বলেন, “হিন্দি ভাষার কোনও ছবির শুটিং এ রাজ্যে হলে, ফেডারেশন প্রযোজকের থেকে দ্বিগুণ টাকা দাবি করে। বিদেশি ছবির ক্ষেত্রে চাওয়া হয় তিন গুণ টাকা। তাঁর কথায়, ‘‘সারা দেশের অন্য কোনও ইন্ডাস্ট্রিতে এই নিয়ম নেই। এই ভাবে তো বাংলায় বাইরের ছবি এবং বিজ্ঞাপনী ছবির শুটিং আরও কমে যাবে।’’
এদিন পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পরিচালকেরা তো কোনও সুবিধাই পান না, অথচ দেশের অন্য ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁদের নানা সুবিধা দেওয়া হয়।’’ তিনি আরও জানান, গত বছর ইন্ডাস্ট্রিতে মোট ১৩৪টি বাংলা ছবি তৈরি হয়। চলতি বছরের শেষে সেই সংখ্যাটি ৩৭। কৌশিক বলেন, ‘‘ইন্ডাস্ট্রিকে যে কোনও রকম গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না, সেটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। একটা কমিটিও তৈরি করা গেল না। সমস্যার সমাধানের আশায় তিন মাস অপেক্ষা তো করলাম। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।’’
এদিন পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেন, “এমনিতেই বক্স অফিসে হিন্দি ছবির তুলনায় বাংলা ছবির প্রযোজকেরা অনেক কম টাকা পান। সেখানে যদি প্রযোজকের রোজগারের জায়গা তৈরি না হয় তাহলে তো আগামী দিনে ইন্ডাস্ট্রিতে আর কোনও প্রযোজক আসবেন না।’’
Be the first to comment