এশিয়াডে সোনা জেতার আগে জলপাইগুড়ির স্বপ্না বর্মন কতটা সরকারি সাহায্য পেয়েছিলেন তা স্পষ্ট নয়। তবে স্বপ্নার সোনা জেতার খবর জাকার্তা থেকে বাংলায় পৌঁছতেই একটা ভবিতব্য গত সন্ধ্যায় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল নবান্নের করিডরে। হলও তাই। বৃহস্পতিবার সক্কাল সক্কাল স্বপ্নার মা-কে ফোন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়, স্বপ্নাকে ১০ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে চাকরি দেবে রাজ্য সরকার।
বুধবার রাতে জাকার্তার মাটিতে জাতীয় পতাকা ওড়ানোর পর স্বপ্না বৃহস্পতিবার সকালেই স্বপ্নার মা বাসনা বর্মনকে ফোন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের তরফে ১০ লক্ষ টাকা আর্থিক পুরস্কার দেওয়া হবে স্বপ্নাকে। দেওয়া হবে সরকারি চাকরিও।
স্বপ্নার সোনা জয় দেখে অনেকেই বলছেন স্বপ্না যেন ফিনিক্স পাখি। স্বপ্নের মতো ফিরে আসা। বারবার চোট পেয়েছেন আর দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেছেন ট্র্যাকে ফেরার। ফিরেওছেন। কখনও প্রতিদিন সাঁতার কেটেছেন ২০ কিলোমিটার, আবার কখনও প্র্যাকটিস করেছেন সাড়ে ছয়-সাত ঘণ্টা। যতবার লোকে ভেবেছে স্বপ্নার কেরিয়ার শেষ, ততবার ফিরে এসেছেন।
শুধু তো চোটের সঙ্গে লড়াই নয়। লড়াই করতে হয়েছে অভাবের সঙ্গে। রিকশাচালক বাবা গত আট বছর ধরে বিছানায়। যখন বাবার স্ট্রোক হয়েছিল তখন স্বপ্নার বয়স ১৩। তারপর একের পর এক হার্ডল টপকানো।
এ বার স্বপ্নার সেই লড়াইকে সম্মান জানাচ্ছে রাজ্য সরকারও। তবে, কবে স্বপ্নাকে সরকারের তরফে সংবর্ধনা দেওয়া হবে সে বিষয়ে এখনও কিছু চূড়ান্ত হয়নি। ১৬ বছর পর বাংলার কোনও অ্যাথলিট সোনা জিতল এশিয়াডে। ২০০২ সালে বুসান এশিয়াডে শেষবার সোনা জিতেছিলেন সরস্বতী দে। তার আগে ব্যাঙ্কক এশিয়াডে জোড়া সোনা জিতেছিলেন জ্যোতির্ময়ী শিকদার।
ক্রীড়া মহলের সঙ্গে জড়িতদের অনেকের মতে, স্বপ্নাকে পুরস্কার তথা স্বীকৃতি দেওয়া ইতিবাচক। কিন্তু সোনা জেতার পর পুরস্কারের তুলনায়, স্বপ্নাদের বেড়ে ওঠার সময় সাহায্য বেশি প্রয়োজন। তাঁদের প্রশিক্ষণ, শারীরিক পুষ্টি এবং ক্রীড়া পরিকাঠামোর জন্য। দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে স্বপ্না সোনা জিতেছেন, তা যেমন বাস্তব, তেমনই এ-ও বাস্তব গ্রাম বাংলায় এমন অনেক স্বপ্নার স্বপ্নপূরণ হয়নি ও হচ্ছে না, শুধুমাত্র সামান্য সাহায্যের অভাবে!
Be the first to comment