মহিলার বয়স বছর পঞ্চাশ। কিন্তু চেহারায় তিনি ৯০ বছরের বৃদ্ধা। কঙ্কালসার চেহারা। মাথায় অবিন্যস্ত চুল, কার্যত জটা। অনাহারে ধুঁকতে ধুঁকতে শরীরে নুয়ে পড়েছে। হৃদস্পন্দন অতি ক্ষীণ, কোনওরকমে প্রাণটাকে ধরে রেখেছে। মানুষের চেহারার যে এত ভয়ঙ্কর, নির্মম পরিণতি হতে পারে সেটা দেখে শিউরে উঠেছিলেন দুঁদে পুলিশ অফিসাররা। খবর প্রকাশ্যে আসার পর চমকে উঠেছে গোটা দেশও।
দিল্লি রোহিনী এলাকায় নিজের ভাইয়ের বাড়িতে বন্দি ওই মহিলাকে উদ্ধারের পর স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছেন পুলিশ অফিসাররা। তাঁর অবস্থা দেখে তাজ্জব চিকিৎসকরাও।
পুলিশ জানিয়েছে, খবর পাওয়ার পর রোহিনী এলাকার ওই বাড়িতে গিয়ে ছাদের এক কোণায় মহিলাকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। হাঁটাচলার ক্ষমতা ছিল না। কথা তো নয়ই। ঠোঁট নাড়ানোর ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছিলেন। নিজের মলমূত্রের উপরেই শুয়ে ধুঁকছিলেন মহিলা। শরীরে অবশিষ্ট কয়েকটি হাড়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, নিজের ভাইয়ের অমানষিক অত্যাচারের শিকার ওই মহিলা। খোলা ছাদে নিজের বোনকেই কখনও বন্ধ করে কখনও বেঁধে রাখত ভাই। চার দিন পর পর খেতে দেওয়া হত একটা পাঁউরুটি। শৌচকর্মও করতে হত ছাদেই। দীর্ঘ দু’বছর ধরে এমনই তীব্র শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা পেয়েছেন মহিলা।
খবরটি প্রথম প্রকাশ্যে আনেন দিল্লির মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন স্বাতী মালওয়াল। টুইটারে এমন ঘটনার কথা লিখে স্বাতী বলেছেন, ‘‘আমি শুধু আশ্চর্য হইনি রীতিমতো হতভম্ব। এমন অমানুষিক আচরণ কেউ করতে পারে ধারণার বাইরে। তাও নিজের বোনের সঙ্গে। ৫০ বছরের মহিলাকে দেখে মনে হচ্ছে ৯০ বছরের বৃদ্ধা। কথা বলা তো দূর কাওকে চিনতে অবধি পারছেন না।’’
হাসপাতালে মহিলাকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন চিকিৎসকরা। তাঁরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন অনাহারের কারণে খেতেও নাকি ভুলে গেছেন তিনি। তাঁর ঠোঁট নোড়ছে শুধু, কিন্তু কথা বার হচ্ছে না। অস্ফুটে নিজের যন্ত্রণার কথাই বলার চেষ্টা করছেন হয়তো।
রোহিনী সেক্টর-৭ থানা মহিলার ভাইয়ের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। এর পর তাঁর জেল, জরিমানা ইত্যাদি নানা আইনি পদ্ধতিতে শাস্তি দেওয়া হবে। কিন্তু, এই অপরাধের শেষ কোথায়? শাস্তির পরেও মানুষের প্রতি মানুষের এমন অমানবিক আচরণের ইতি হবে কী? প্রায় প্রতিদিনই বৃদ্ধ বাবা-মায়ের উপর নিগ্রহের নানা ছবি থাকে খবরের শিরোনামে। শাশুড়িকে হাফ প্যাকেট মুড়ি দিয়ে বারান্দায় বার করে দেওয়ার খবর ঘুরছে লোকের মুখে মুখে। এই অপরাধের শেষ নেই। আইন শুধু শাস্তি দিতে পারে, চরিত্র বদলাতে পারে না। যতদিন মানুষ তার ভিতরের ঘৃণ্য, লোলুপ মনটাকে বদলাতে না পারবে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
Be the first to comment