ছোট খাটো নেতা পরের কথা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার একাংশ মন্ত্রী যখন মুসলিম সম্প্রদায় সম্পর্কে বাজে কথা বলে সমাজে বিভাজন উস্কে দিচ্ছেন, তখন দিল্লির মঞ্চে দাঁড়িয়ে গেরুয়া শিবিরকে সবক দিতে চাইলেন আরএসএসের সর সঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত। তাঁর স্পষ্ট বার্তা, “হিন্দু রাষ্ট্র মানে এই নয় যে সেখানে মুসলিমদের কোনও জায়গা নেই। যে দিন আমরা এ কথা বলব সে দিন আর হিন্দুত্ব থাকবে না। কারণ হিন্দুত্ব মানে ভারতীয়ত্ব। অর্থাৎ সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলা।”
রাজনৈতিক মহলে দীর্ঘ লালিত ধারনা হল, আরএসএসের সর সঙ্ঘচালক তথা প্রধানই হলেন গেরুয়া শিবিরের সর্বোচ্চ নেতা। তাঁর মুখ থেকে বেরোনো এই বার্তা সর্বভারতীয় স্তরের রাজনীতির জন্য বড় ব্যাপার বইকি।
নয়াদিল্লির বিজ্ঞান মঞ্চে তিন দিন ধরে একটি সম্মেলনের আয়োজন করেছে আরএসএস। যে সম্মেলনে আলোচনার মুখ্য বিষয় হল, ‘ভবিষ্যতের ভারত’। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ওই মঞ্চ থেকেই গোটা দেশের সামনে ‘হিন্দুত্বের’ ব্যাখ্যা রাখতে চেয়েছেন মোহন ভাগবত।
সঙ্ঘ প্রধান এ দিন বলেন, “আরএসএস বিশ্বজনীন সৌভ্রাতৃত্বের দর্শনে বিশ্বাস করে। যে দর্শনের মূল কথাই হল, বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য। এবং এই ধারনা ভারতীয় সভ্যতা থেকেই উঠে এসেছে। যাকে আমরা হিন্দুত্ব বলি।” তাঁর কথায়, সংবিধান রচনার সময় বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকরও বিশ্বজনীন সৌভ্রাতৃত্বের দশর্নের কথাই বলেছিলেন।
প্রসঙ্গত, এই সঙ্ঘ পরিবারকেই সম্প্রতি বিদেশ সফরে গিয়ে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন রাহুল গান্ধী। সমাজে বিভাজন সৃষ্টির জন্য আরএসএসকে মুসলিমি ব্রাদারহুডের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন তিনি। রাহুলের নাম অবশ্য এ দিন মুখে আনেননি মোহন ভাগবত। কিন্তু সঙ্ঘ নেতাদের মতে, রাহুলের তত্ত্বকে খারিজ করতেই গ্লোবাল ব্রাদারহুড বা বিশ্বজনীন সৌভ্রাতৃত্বের কথা বলেছেন ভাগবত।
তা ছাড়া ভাগবত এ দিন এও বলেন, অনেকেরই ধারনা রয়েছে নাগপুর থেকে কেন্দ্রের সরকার নিয়ন্ত্রিত হয়। নাগপুর নির্দেশ দেয় আর কেন্দ্রের সরকার তা পালন করে। কিন্তু এটা ঠিক নয়। সরকার ও বিজেপি-র দৈনন্দিন কাজে আরএসএস কখনওই নাক গলায় না। কেন্দ্রে যাঁরা মন্ত্রী হয়েছেন তাঁদের অনেকে আমাদের স্বয়ংসেবক ঠিকই। কিন্তু তাঁরা তাঁদের কাজ নিজেরাই করতে সক্ষম।
এখন প্রশ্ন হল, মোহন ভাগবত কেন এমন কথা বলছেন? মোদী-অমিত শাহদের মত ও পথের সঙ্গে আরএসএসের দর্শন যে মেলে না তা কেন সাদায় কালোয় সামনে এনে ফেললেন তিনি? তা হলে কি নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদীর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ানো শুরু করল আরএসএস!
Be the first to comment