মুখে কালির দাগ, গায়ে জংলা পোশাক, মাথায় বাঁধা কালো কাপড়। দিন-রাত এক করে ছত্তীসগড়ের মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় জঙ্গলে পাহারা দেওয়া মেয়েটাই উঠলেন ‘ভোগ উওম্যান অফ দ্য ইয়ার, ২০১৮’র মঞ্চে। দর্শকাসনে বসে আলিয়া ভাট থেকে শুরু করে করিনা কাপুর খান। পেলেন ‘ভোগ ইয়ং অ্যাচিভার অফ দ্য ইয়ার’ পুরস্কার। দেশের একমাত্র মহিলা কোবরা কম্যান্ডো, ঊষা কিরণ।
সালটা ২০১৪, সিআরপিএফের ২৩২ মহিলা ব্যাটেলিয়নে যোগ দিয়েছিলেন ঊষা। এক বছর পরেই দেশের প্রথম মহিলা হিসেবে কোবরা কম্যান্ডোতে যোগ দেন। কোবরা বাহিনীতে ছেলেদের সঙ্গে তাঁকে যুক্ত করার অনুরোধ এসেছিল খোদ সিআরপিএফের তরফেই। কোন এলাকায় যেতে চান, প্রশ্ন করা হলে তিনটি এলাকার নাম বলেছিলেন ঊষা। জম্মু-কাশ্মীর, উত্তর-পূর্বের পাহাড়ি অঞ্চল, ছত্তীসগড়ের মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকা। সেই থেকে পোস্টিং বাস্তারে।
জঙ্গলের প্রত্যন্ত এলাকায় মাওবাদীদের মোকাবিলা করার জন্য যে গোরিলা পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া হয়, সেই পদ্ধতিতেই সিদ্ধহস্ত কোবরা কোম্যান্ডোরা। কোবরা বাহিনীতে সবাই তাঁকে ডাকেন ‘লেডি সিংহম’ নামে। কেন এই নাম? তার কারণ পুরুষ কোবরাদের তুলনায় কোনও অংশেই কম নন ঊষা। গ্রামের মহিলা ও শিশুরা পুরুষ কোবরাদের ভয় পান বলে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন ঊষা। নিজের ইউনিটের হেড তিনি।
২৮ বছরের এই তরুণীর মুখ দেখলে অবশ্য বোঝার উপায় নেই ভেতরের ইস্পাত কঠিন মানসিকতাকে। নিজের ইউনিটের লোকরাও তাঁকে ভয় পান। কাজের সময় স্ট্রিক্ট এই কম্যান্ডো আবার কাজের বাইরে সর্বক্ষণ আনন্দে ক্যাম্প মাতিয়ে রাখা এক অন্য ঊষা। অবসরে গ্রামের বাচ্চাদের পড়ানোর দায়িত্বও নিয়েছেন। গ্রামবাসীরা একবাক্যে স্বীকার করেন, ঊষা আসার পর সত্যিই বাস্তার এলাকার অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
এই ঊষাকেই এ বার তাঁর সাহস, শৌর্য ও সেবামূলক কাজের জন্য ‘ভোগ ইন্ডিয়া’ ম্যাগাজিনের তরফে ‘ভোগ ইয়ং অ্যাচিভার অফ দ্য ইয়ার’ পুরস্কারের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। ‘ভোগ ইন্ডিয়া’এর ক্যালেন্ডারেও আছেন ঊষা। সেখানে বাকিরা ডিজাইনার পোশাকে থাকলেও এই ‘লেডি সিংহম’ কিন্তু আছেন কম্যান্ডোর পোশাকেই। পুরস্কার অনুষ্ঠানেও চারদিকে ফ্যাশনের ছড়াছড়ির মাঝে কম্যান্ডো পোশাকেই দেখা গেল ঊষা কিরণকে। এতেই বোঝা গেল দেশের প্রথম মহিলা কোবরা কম্যান্ডোর প্রথম সবকিছুই তাঁর দেশ। আর তাই কম্যান্ডোর পোশাকই তাঁর কাছে সবথেকে প্রিয়।
র্যাম্পেও হাটলেন ঊষা। কম্যান্ডোর পোশাকে যখন তিনি হাটছেন, সবথেকে জোরে হাততালিটা শোনা গেল ঠিক তখনই। দর্শকরাও স্যালুট জানালেন তাঁকে। পুরস্কার নেওয়ার পর সব জওয়ানদের তা উৎসর্গ করলেন ঊষা। বললেন, ” এই পুরস্কার শুধুমাত্র ঊষা কিরণের নয়। এই পুরস্কার প্রত্যেক জওয়ানের যাঁরা দেশের শান্তি বজায় রাখতে নিজেদের ঘাম-রক্ত ঝড়ান।”
ভয়কে জয় করেছেন আগেই। ইস্পাত কঠিন মানসিকতা ও শারীরিক সক্ষমতাকে হাতিয়ার করে দুর্গম এলাকায় দেশের কাজে ব্রতী এই ‘লেডি সিংহম’ বুঝিয়ে দিলেন সত্যি ভারতের প্রত্যেক মেয়ের কাছে তিনি ঊষার কিরণ।
Be the first to comment