রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ, শিবসেনা, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বজরং দলের ডাকে ধর্মসভায় যোগ দিতে গোটা দেশ থেকে কয়েক হাজার হিন্দুত্ববাদীর জমায়েত অযোধ্যায়। শনিবার সপরিবারে সেখানে পৌঁছে গিয়েছেন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে। ধর্মসভা থেকে অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে রাম মন্দির নির্মাণের ডাক দেবেন উদ্ধব ঠাকরেরা। আর সেই সভাকে কেন্দ্র করে কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে উত্তরপ্রদেশের এই জনপদকে।
৭ হাজার রাজ্য পুলিশ, ১০ কোম্পানি আধা সেনা মোতায়েন করা হয়েছে অযোধ্যায়। লাগোয়া সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে শনিবার গভীর রাতে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। কংগ্রেস, বহুজন সমাজবাদী পার্টি এবং সমাজবাদী পার্টির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে সেনা নামানোর।
প্রসঙ্গত, ঐতিহাসিক অযোধ্যা মামলা আপাতত সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। ২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট বিতর্কিত ওই জমিকে তিনভাগে ভাগ করার রায় দিয়েছিল। সেই মামলার রায়কে চ্যালেঞ্জ করে একাধিক সংগঠন মামলা করে সুপ্রিম কোর্টে। ইতিমধ্যেই দেশের শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিয়েছে আগামী জানুয়ারিতে নতুন বেঞ্চ গঠন করে তারপর অযোধ্যা মামলার শুনানি শুরু হবে। তারপরও হিন্দুত্ববাদী বেশ কিছু সংগঠন সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানায় শুনানির সময় এগিয়ে আনার। কিন্তু আদালত সেই আর্জি খারিজ করে দেয়। তারপরই অযোধ্যায় ধর্মসভা করার সিদ্ধান্ত নেয় একাধিক সংগঠন।
শিবসেনার মতো একদা বিজেপি-র বন্ধু দলও রামমন্দির নির্মাণে মোদী-শাহদের অনীহার অভিযোগ তুলে সুর চড়াচ্ছেন। উদ্ধব ঠাকরে তো স্লোগানই দিয়ে দিয়েছেন, ‘আগে মন্দির, পরে সরকার।’ পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, গোটা পরিস্থিতিতে চাপে বিজেপি। যে ভাবে ভিএইচপি বা শিবসেনা সরকারের সমালোচনা শুরু করেছে তাতে হাত পুড়ছে পদ্ম শিবিরেরই। চাপের মুখে পড়েই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ঘোষণা করেছেন সরযূর তীরে বিরাট রামমূর্তি নির্মাণ হবে। প্রথমে ধর্মসভা নিয়ে বিজেপি-র প্রচ্ছন্ন সমর্থন থাকলেও পরে তার নেতৃত্ব চলে যায় অন্যদের হাতে। রবিবার দুপুরে ধর্মসভা থেকে হিন্দু সংগঠনগুলির নেতারা রামমন্দির নিয়ে যদি বিজেপি বা মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বসেন তাহলে আরো চাপ বাড়বে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
রাজনৈতিক মহলের অনেকে আবার এ-ও বলছেন, এ সবই বিজেপি-র রণ কৌশল। আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি কেন্দ্রের শাসক দল হিসেবে মুখ না খুলে এইভাবে বিভিন্ন সংগঠনকে ময়দানে নামিয়ে হিন্দুত্বের হাওয়া জাগিয়ে রাখতে চাইছে তারা। সেই সঙ্গে ভিএইচপি-র মতো সংগঠনের নেতাদের দিয়ে সমালোচনা করিয়ে এই বার্তা দেওয়া যে, সরকার আসলে মন্দির নির্মাণের রাজনীতি করছে না। তাদের একমাত্র কাজ উন্নয়ন। ধর্মের উর্ধে উঠে দেশের দেশের মানুষের স্বার্থে কাজ করছে সরকার, এটা বিশ্বাসযোগ্য করতেই বিজেপি এই কৌশল নিয়েছে। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, “বিজেপি-র বিরুদ্ধে বিশ্বহিন্দু পরিষদ বা শিবসেনা যাই বলুক, পুরোটাই স্ক্রিপ্টেড।” কারণ বিজেপি-ও জানে, উনিশের ভোট পর্যন্ত এই হাওয়া জাগিয়ে না রাখতে পারলে জন সমর্থনে ধস নামতে পারে।
Be the first to comment