মাত্র আট মাস সরকারে নেই। আর এর মধ্যেই জৌলুস হারাল ত্রিপুরার সিপিআইএম। সাদামাঠা ভাবেই রবিবার শুরু হল সিপিএমের উত্তর-পূর্বের ছোট্ট রাজ্যটির ২২ তম সম্মেলন। দেশের সব রাজ্যেরই সম্মেলন হয়ে গিয়েছে চলতি বছরের এপ্রিল মাসের আগেই। দলের নিয়মানুযায়ী সর্বভারতীয় পার্টি কংগ্রেসের আগেই সব স্তরের সম্মেলন প্রক্রিয়া শেষ করতে হয়। কিন্তু দিল্লির এ কে গোপালন ভবন (সিপিএমের সদর দফতর) বিশেষ অনুমতি দিয়েছিল ত্রিপুরাকে। যেহেতু ত্রিপুরায় বিধানসভা ভোট ছিল তাই এই রাজ্য সম্মেলন বকেয়া রেখেই মানিক সরকাররা গত এপ্রিলে হায়দরাবাদ পার্টি কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন।
সিপিএমের অভিযোগ, রাজ্যে পালা বদলের পরই তাদের দলের নেতাকর্মীদের উপর সন্ত্রাস নামিয়ে এনেছে গেরুয়া বাহিনী। কয়েক দিন আগে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা দলের পলিটব্যুরোর সদস্য মানিক সরকারের উপরেও হামলার ঘটনা ঘটে। যদিও বিজেপি নেতাদের দাবি, এ সবই মানুষের জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। সব মিলিয়ে যে কোনও কারণেই হোক, পার্টি কংগ্রেসের পর ছ’মাস কেটে গেলেও রাজ্য সম্মেলন করতে পারেনি সিপিএম। লোকাল কমিটি এবং মহকুমা কমিটির সম্মেলনগুলিও করতে হয় গোপনে। আটটি সাংগঠনিক জেলা কমিটির সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হয় আগরতলার মেলার মাঠের রাজ্য দফতরে। এর মধ্যেই গত রবিবার বৈঠকে বসে ত্রিপুরা সিপিএম। তড়িঘড়ি তারিখ ঠিক করা হয় সম্মেলনের। রবিবার থেকে শুরু হয়েছে সম্মেলন। চলবে সোমবার দুপুর পর্যন্ত।
কিন্তু সেই সম্মেলন দেখে অনেকেই বলছেন আট মাসেই জৌলুস হারিয়েছে ত্রিপুরা সিপিএম। কমেছে প্রতিনিধি সংখ্যাও । গতবার যেখানে ছিল ৫০০ জনের বেশি প্রতিনিধি, এ বার আগরতলা টাউনহলের সম্মেলনে মোট প্রতিনিধি সংখ্যা ৩২২জন। আগের মতো আড়ম্বরও নেই। আগে রাজ্য সম্মেলন মানেই ছিল প্রতিনিধিদের হাতে জিন্সের দামি ব্যাগ। কিন্তু এ বার প্রতিনিধিদের সম্পাদকীয় খসড়া প্রতিবেদন বিতরণ করা হয়েছে কমদামী ফোল্ডারে। এমনকী সম্মেলনে যোগ দিতে আসা দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, পলিটব্যুরোর সদস্য প্রকাশ কারাট, বৃন্দা কারাট, বিমান বসুদেরও ধরানো হয়েছে ওই ফোল্ডার। টাউন হলের পাশেই একটি অনুষ্ঠান বাড়িতে খাওয়াদাওয়ার বন্দোবস্ত করেছে ত্রিপুরা সিপিএম। সেই খাবারের মেনুতেও এসেছে পরিবর্তন। আগের মতো সেই এলাহি আয়োজন নেই। ভাত, ডাল, তরকারি আর এক টুকরো মাছ দিয়েই রবিবারের লাঞ্চ সারতে হয়েছে সিপিএম নেতাকর্মীদের।
এর মধ্যে পলিটব্যুরো তথা কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে রাজ্য সম্পাদক কাকে করা হবে তা নিয়ে। সিপিএমের নিয়মানুযায়ী তিন বারের বেশি কেউ এক স্তরে সম্পাদক হিসেবে থাকতে পারবেন না। ত্রিপুরার বর্তমান রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর তিনটি টার্ম সম্পূর্ণ করেছেন। পলিটব্যুরোর একাংশের মত, বিশেষ পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে বিজনবাবুকেই রাজ্য সম্পাদক পদে রেখে দেওয়া হোক। যদিও একাংশের নেতারা চাইছেন, রাজ্য সম্পাদক পদে বদল আনতে। সেক্ষেত্রে আবার উঠে আসছে দুটি নাম। এক, মানিক সরকার। অনেকের মতে, যেহেতু মানিক সরকার বিরোধী দলনেতা তাই তাঁকে সেই কাজটাই মন দিয়ে করতে দেওয়া হোক। ত্রিপুরা সিপিএমের অন্দরে রাজ্য সম্পাদক হওয়ার ক্ষেত্রে আরও একটি নাম জোরালো ভাবে ভাসছে। তিনি হলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সামনের সারির নেতা গৌতম দাসের নাম।
Be the first to comment