সেই জুন মাসে দলের কোর কমিটির বর্ধিত বৈঠক থেকে ঝাড়গ্রাম জেলার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর হুল দিবসে ঝাড়গ্রাম সফরেও গিয়েছিলেন মমতা। সোমবার ফের জঙ্গলমহলের নতুন জেলায় সফরে গিয়ে নাম না করে বিভাজনের রাজনীতি নিয়ে বিজেপি-র বিরুদ্ধে তোপ দাগার পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মী ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের সমঝে দিলেন, উন্নয়নের যে যজ্ঞ হয়েছে এই জেলায়, তা মানুষের কাছে যথাযথ না ভাবে পৌঁছনোয় তিনি ক্ষুব্ধ ও হতাশ।
সম্প্রতি লালগড়ের পূর্ণাপানিতে সাত জন শবর সম্প্রদায়ের মানুষের মৃত্যু নিয়ে চাপান উতোর হয়েছিল বাংলার রাজনীতিতে। যদিও পরের দিনই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, অনাহার বা অভাবের কারণে ওই আদিবাসীদের মৃত্যু হয়নি। জেলা প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকরাও জানিয়েছিলেন, অতিরিক্ত মদ্যপানের জন্য লিভারের অসুখ থেকেই মৃত্যু হয়েছে শবরদের। এ দিনের সরকারি সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আগে যখন আমি এখানে আসতাম, আমাকে এখানকার মানুষ নানান অভিযোগ করতেন। তখন জেনেছিলাম। বছরের অর্ধেক সময় না খেয়ে থাকেন জঙ্গলমহলের মানুষ। পিঁপড়ে সেদ্ধ খেয়ে দিন কাটান। কিন্তু সরকারে আসার পর উজাড় করে দেওয়া হয়েছে মানুষের উন্নয়নে। এখন সব মানুষ দুটাকা কেজি চাল, গম পান।” মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, “জনপ্রতি মাসে আট কেজি চাল আর তিন কিলো গম দেওয়া হয় সরকার থেকে। অর্থাৎ একজন মাসে ১১কেজি চাল-গম পান। একটা পরিবারে পাঁচ জন থাকলে সেই পরিবার মাসে ৫৫ কেজি চাল-গম পান। আমি শুনেছি অনেকের এত পরিমাণ চাল-গম লাগেনা। অনেকে আবার তা বিক্রিও করে দেন।” বিরোধীদের তোলা অনাহারের তত্ত্বকে উড়িয়ে মমতা বলেন, “ আমি বিশ্বাস করি না কেউ না খেয়ে আছে।”
বাম জমানার শেষ পর্যায়ে যখন অশান্ত জঙ্গলমহল, প্রতিদিন যখন রাস্তায় লাশ পড়ে থাকত, সেই সময় বিভিন্ন ব্লকে যাওয়ার স্মৃতিচারণা করে মমতা বলেন, “যখন এখানে রক্ত ঝরত, এখানে তখন কেউ আসত না। সেই সময়ও আমি এসেছি। পিড়াকাটার জঙ্গলে তিন ঘণ্টা আটকে থেকেছি। কিন্তু দমে যাইনি। বুকে হাত দিয়ে বলুন, উন্নয়ন হয়েছে কি হয়নি? কী করিনি! নয়াগ্রামে গেলাম, বলল দিদি একটা স্টেডিয়াম করে দিন। কি করিনি? কেশিয়াড়িতে গেলাম বলল দিদি ব্রিজ লাগবে। বলুন করেছি কি করিনি? এক দিকে সিপিএমের করে যাওয়া দেনা, অন্য দিকে দিল্লির সরকারের টাকা কেটে নেওয়া, এত কিছুর পরেও যা করেছি দুনিয়ার কোনও সরকার করতে পারবে না।”
বিজেপি-র উদ্দেশে মমতা বলেন, “ওরা যেমন হিন্দু-মুসলমান লড়াই লাগাতে চায়, তেমন আদিবাসী-মাহাতো লড়াই বাঁধাতে চায়। ভাত দেওয়ার মুরোদ নেই কিল মারার গোঁসাই। ভোটের আগে টাকার ঝুলি নিয়ে চলে আসে। ওদের টাকা নেবেন। কিন্তু ভোট দেবেন না।” এ দিন মমতা বলেন, “কিছু হলেই বলে দিচ্ছে জয় শ্রীরাম। তোমাদের রাম থাকলে আমাদের দুর্গা আছেন। রামচন্দ্রই তো দুর্গার পুজো করেছিল। ওদের নেতা রাম হলে আমাদের নেতা মা দুর্গা। আসলে ওরা রাবনের পুজো করে। ওরা দেবতাকে বিক্রি করে খায়। আর দেশে আগুন জ্বালায়।”
জঙ্গলমহলে মাওবাদী দমনে তৃণমূল সরকারের সাফল্যের কথা তুলে ধরে ছত্তীসগড়ে মাও মোকাবিলা না করতে পারার জন্য বিজেপি-কে নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে দলীয়কর্মী এবং প্রশাসনিক আধিকারিকদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কেউ কেউ বাইরে থেকে এসে মাথায় ফেট্টি বেঁধে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে। মানুষের কাছে গিয়ে আসল কথাটা তুলে ধরুন।”
দেখুন ছবি-
Be the first to comment