হাওড়ায় অশান্তির ব্লু প্রিন্ট তৈরি হয় দিল্লিতে! ‘ক্রনোলজি’ বোঝালেন অভিষেক

Spread the love

হাওড়ায় রামনবমীর মিছিলে দুই সম্প্রদায়ের অশান্তির ঘটনায় কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার ঠিক পর এই অশান্তির ঘটনায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের যোগ রয়েছে বলে দাবি করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার তৃণমূল ভবন থেকে সাংবাদিক বৈঠক করে শুভেন্দু অধিকারির নাম না করে অভিষেক জানালেন, “২৭ মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে সাক্ষাত করলেন। এরপর ২৯ তারিখ শ্যাম বাজারে তিনি বললেন, আগামী কাল টিভির পর্দায় নজর রাখুন। ৩০ তারিখ হাতে পিস্তল নিয়ে জল্লাদদের উল্লাস হল হাওড়ায়। আপনারা ক্রনোলজি বুঝুন।”

শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে আমাদের কাছে খবর ছিল। মুখ্যমন্ত্রী সতর্কও করেছিলেন। তারপরও বাংলার সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা চালালো। একটা রাজনৈতিক দল নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে কোনও পুলিশি অনুমতি ছাড়া গায়ের জোরে ওই রুটে রামনবমীর নামে শোভাযাত্রা করে এলাকার শান্তি নষ্টের নিদর্শন আমরা দেখলাম। হাতে বন্দুক
নিয়ে, তলোয়ার নিয়ে, গরিব ফলওয়ালার ভ্যান জ্বালিয়ে এ কেমন রাম নবমীর মিছিল? উগ্রভাবে রামের নামে মিছিল করে হিংসা ছড়ানো! এটা কি প্রথা? আমরাতো ছোট থেকে এমন জিনিস দেখিনি।” গোটা ঘটনায় বিজেপিকে তোপ দেগে অভিষেক বলেন, “১৬ সালে কয়েকটা আসন পাওয়ার পর থেকে ১৭ সাল থেকে এটা শুরু করেছে বিজেপি। জায়গায় জায়গায় অশান্তি লাগিয়ে দাও এটাই ওদের উদ্দেশ্য। যারা রাজনৈতিক ভাবে লড়তে না পেরে মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগকে আঘাত করে জল্লাদের মতো উল্লাস করে তাদের নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। এখনপ বিজেপি নেতারা ওই এলাকায় গিয়ে উস্কানি দিয়ে বেড়াচ্ছে। মানুষকে অনুরোধ করব ওদের উস্কানিতে পা দেবেন না। শুধু বাংলা নয় এই বিজেপি গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড, বিহারে অন্তত ১০০ টি জায়গায় এই ধরণের ঘটনা ঘটানো হয়েছে।”

পাশাপাশি যে মিছিলকে ঘিরে অশান্তির ঘটনা ঘটে তার কোনও পুলিশি অনুমতি ছিল না প্রমাণ দিয়ে অভিষেক বলেন, “দুটো আলাদা মিছিল বেরিয়েছিল যাদের কোনও অনুমতি ছিল না এই দুই মিছিল মিলে গিয়ে এই ঘটনা ঘটায়।” অভিষেক নথি তুলে ধরে বলেন, দুটি মিছিলের আবেদন পুলিশের কাছে জমা পড়েছিল প্রথমটি ২১ মার্চ বিশ্বহিন্দু পরিসদের তরফে, দ্বিতীয়টি অঞ্জনি পুত্র সেনার তরফে। কিন্তু পুলিশের তরফে পাল্টা ৪টি শর্ত দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়। যেখানে বলা হয়, ১. মিছিল শুরু করতে হবে ২.৩০ মিনিটে শেষ করতে হবে ৫ টায়। ২. মিছিলে যে সব সদস্য উপস্থিত থাকবে তাদের নাম সহ বিস্তারিত পুলিশকে জানাতে হবে। ৩. কোনও রকম উস্কানি মূলক শ্লোগান দেওয়া যাবে না, যা কারও ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করে। ৪. কোনও রকম অস্ত্র, মটরসাইকেল, ডিজে ব্যবহার করা যাবে না। পাশাপাশি আগের বছরের পুলিশের অনুমতি পত্র জমা দিতে বলা হয়। তবে এরপর আর পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি ওরা। যা চাওয়া হয় তার একটাও জমা দেয়নি। সম্পূর্ণ অনুমতি ছাড়া এরা প্রতিটা জায়গায় বেআইনিভাবে মিছিল করেছে। ‘অনুমতি ছিল কিন্তু পুলিশকে জানিয়েছিলাম, পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি’ যা বলা হচ্ছে এটা সর্বৈব মিথ্যা। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

এরপর সরাসরি বিজেপিকে তোপ দেগে অভিষেক বলেন, “যারা ভাবছে এই ধরনের অশান্তি করে বাংলায় ক্ষমতা দখল করব, তারা মুর্খের স্বর্গে বাস করছে। মানুষের কাছে অনুরোধ যারা অশান্তি বাধানোর চেষ্টা করছে তাদের একজনকেও রাজনৈতিকভাবে ছাড়বেন না। এই গোটা ঘটনায় একবারও বিজেপির কোনও নেতার তরফে দুঃখপ্রকাশ করা হয়নি। বিজেপির একটা নেতা বলুক যারা আগুন জ্বালিয়েছে তারা গ্রেফতার হোক। আমি চ্যালেঞ্জ করছি। ওরা কেউ বলবে না কারণ এই ঘটনা ওদেরই ষড়যন্ত্রে ঘটেছে।” একইসঙ্গে তিনি বলেন, “এই বিজেপির কাছে হিন্দুত্বের সার্টিফিকেট নিতে হবে? আমি স্বামী বিবেকানন্দের হিন্দুত্বে বিশ্বাসী, যোগী আদিত্যনাথের হিন্দুত্বে নয়। বাংলার বুল্ডোজার চলে পরিকাঠামো গড়ার জন্য নষ্ট করার জন্য নয়। এতবড় একটা ঘটনা কেউ দুক্ষপ্রকাস করেনি। এদের কাছে আমরা হিন্দুত্ব শিখব?”

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*