অবশেষে যন্তর-মন্তরে তৃণমূলের অবস্থানের অনুমতি মিলেছে। বাকি জায়গায় এখনও অনুমতি মেলেনি। ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। তবে অনুমতি না মিললেও রণকৌশল বদলাচ্ছে না। রবিবার রাতে বর্ষীয়ান নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিল্লির বাসভবনে বৈঠকের পর একথা স্পষ্ট করে দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় (Abhishek Banerjee)। পুলিশ আক্রমণাত্মক হলেও জমি না ছাড়ার প্রস্তাব দিয়েছেন অভিষেক। যদিও বৈঠকে উপস্থিত শীর্ষ নেতাদের অনেকেই এই প্রস্তাব মানতে নারাজ। বঞ্চিতদের গায়ে হাত পড়ুক, এটা ঠিক হবে না বলে জানিয়েছেন বর্ষীয়ান নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অনেকেই। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং দেখা না করলে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা উচিত হবে কি না, মঙ্গলবারের কর্মসূচি কী হবে, তা এদিনও স্পষ্ট হল না। তবে মতানৈক্য থাকলেও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ঝাঁঝ যে বাড়ানো হবে, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিন বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কেন্দ্রকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পারলে আমায় আটকান। আমি কোনও তদন্তকারী সংস্থাকে এ চ্যালেঞ্জ করিনি। কিন্তু, দিল্লির মাটিতে দাঁড়িয়ে আরও একবার এ কথা বলে গেলাম।”
রাজ্যের বকেয়া আদায়ের দাবিতে ইতিমধ্যে দিল্লি পৌঁছেছেন-সহ তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, আগামিকালের রণকৌশল স্থির করতে এদিন রাতে সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে বৈঠক বসে। সেই বৈঠকে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন ঝাঁঝালো করার প্রস্তাব দেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি নতুন সংসদ ভবন করে দেশবাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। এবার সেই সংসদ ভবন নিয়েই পাল্টা চাপ দেওয়ার ঘুঁটি সাজাচ্ছেন তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড।
এদিনের বৈঠক থেকে অভিষেকের প্রস্তাব, আগামিকাল বিকেলে জব কার্ড হোল্ডারদের নতুন সংসদ ভবন ঘুরিয়ে দেখানোর ব্যবস্থা করা হোক। এব্যাপারে অভিষেকের বার্তা, “জনগণের টাকা না দিয়ে নতুন সংসদ ভবন তৈরি হয়েছে ওরা দেখুক।” আবার মন্ত্রী গিরিরাজ সিংয়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ধরনা অবস্থানে বসে পড়ার প্রস্তাব দিয়েছেন অনেকে। পুলিশ আক্রমণাত্মক হলেও জমি না ছাড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যদিও গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েত মন্ত্রী গিরিরাজ সিং তৃণমূল প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করবেন কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়। কেননা কয়েক মাস আগেও একইভাবে বকেয়ার দাবিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে দেখা না পেয়ে ফিরে আসতে হয়েছে তৃণমূল সাংসদদের। সংসদ চত্বরে ধরনা-অবস্থান করেই প্রতিবাদ জানান তাঁরা। ফলে এবারেও গিরিরাজ সিংয়ের বদলে ওই মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী দেখা করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে তৃণমূল নেতাদের অনেকে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা না করার প্রস্তাব দিলেও বিপরীত মত অভিষেকের। তাঁর কথায়, “গিরিরাজ সিং দেখা না করলে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা উচিত।” তবে এই বিষয়টি চূড়ান্ত করতে আগামিকাল ফের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে বৈঠকে বসবেন তৃণমূল নেতৃবৃন্দ।
অন্যদিকে, যন্তর-মন্তরের পাশাপাশি আগামিকাল রাজঘাটে ধরনা-অবস্থানে বসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামিকাল দুপুর ১ টার মধ্যে রাজঘাটে পৌঁছবেন তৃণমূল সাংসদরা। সেখানে ২ ঘণ্টা ধরনায় বসবেন। এরপর সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে বৈঠকে বসবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
এই কর্মসূচি হঠাৎ করে নেননি। ‘নব জোয়ার’ কর্মসূচিতে গিয়েই ১০০ দিনের টাকা আদায়ের জন্য ‘দিল্লি চলো’-র ভাবনা মাথায় এসেছিল বলে এদিনের বৈঠকে জানালেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
Be the first to comment