চিরন্তন ব্যানার্জি :-
পুজোর মুখে বড়সড় বিপত্তির মুখে বাংলা। রাজ্যের ১২টি জেলা পড়েছে বন্যার প্রকোপ। নবান্নের প্রাথমিক হিসাবে প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ বন্যার প্রকোপে পড়েছেন। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েকশো কোটি টাকা। সব থেকে বেশি ক্ষতিসাধন হয়েছে কৃষির ক্ষেত্রে। পাশাপাশি ক্ষতিসাধন হয়েছে ব্যক্তিগত সম্পত্তি নষ্টের ক্ষেত্রেও। বন্যার জেরে বড় সড়ক থেকে গ্রামীণ রাস্তা-সবই জলমগ্ন হয়ে পড়ায় বহু ব্লকের সঙ্গে যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। সরকারি হিসাবে এখনও পর্যন্ত ২০জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গতকাল থেকেই বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শনে নেমে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবারও তিনি বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে যান। জেলা হিসাবে সব থেকে বেশি দুর্গত অবস্থায় রয়েছে হুগলি, হাওড়া এবং দুই মেদিনীপুর। এছাড়াও বীরভূম ও মুর্শিদাবাদেও বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে পূর্ব বর্ধমান ও বাঁকুড়া জেলার একাংশও।
মুখ্যমন্ত্রীর পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার এলাকার বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে বেরোন। সেই পরিদর্শন সেরে তিনি কলকাতায় ফিরে বন্যায় মৃতদের পরিবারদের নিকটজনদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়ে কিছু ঘোষণা করতে পারেন বলেই জানা গিয়েছে। ডিভিসির পাশাপাশি মুকুটমণিপুর থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ কমানো হলেও তা যে একদমই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তা নয়। ফলে বন্যা দুর্গত এলাকা থেকে জল নামতে আরও অন্তত ১ সপ্তাহ সময় লাগবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে নবান্নের আধিকারিকদের বেশি চিন্তা কৃষির ক্ষেত্রে বড়সড় ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে। তাঁদের অনুমান, পূর্ব বর্ধমান, বাঁকুড়া, দুই মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ জেলায় বন্যার জেরে ধানের ক্ষতির পরিমাণই ৫০ কোটি টাকার আশেপাশে হবে। এর সঙ্গে থাকছে শাকসবজি ও ফুলচাষের ক্ষতি। জল নেমে গেলে সরকারি ভাবে সেই সব ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা হবে বলে জানা গিয়েছে। কৃষকদের মধ্যে যারা বাংলা শস্য বিমা যোজনার আওতায় আছেন তাঁরা ক্ষতিপূরণও পয়েছে যাবেন। তবে বন্যার জেরে মাটির বাড়ি থেকে পাকা বাড়ির যে সব ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা কীভাবে মেটানো হবে সেই চিন্তায় রয়েছে রাজ্যের সরকারি আধিকারিকেরা।
বৃহস্পতিবার সকালে জানা গিয়েছে, বাঁকুড়া ও বীরভূম জেলা থেকে বন্যার জল ইতিমধ্যেই নামতে শুরু করে দিয়েছে। আগামিকাল থেকে মুর্শিদাবাদ ও পূর্ব বর্ধমান জেলা থেকেও জম নামার সম্ভাবনা থাকছে। কিন্তু হুগলি জেলার আরামবাগ মহকুমা, হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়া মহকুমা, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল মহকুমার জল নামতে আরও অন্তত ১ সপ্তাহ সময় লাগবে বলেই জানা গিয়েছে। একই সঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরে জেলায় এদিন থেকেই বন্যার জল হু হু করে ঢুকবে বলে মনে করা হচ্ছে। সেখানে এদিন থেকে নতুন করে কোন কোন এলাকা প্লাবিত হয় সেইদিকেও নজর থাকবে রাজ্য প্রশাসনের। বন্যার জেরে কৃষি ক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় উৎসব মরশুমে চালের পাশাপাশি সবজির দাম আবারও বাড়তে চলেছে। একই সঙ্গে ফুলের দামও বেশ ভালই চড়া হবে বলে জানা গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত বাংলার এই বিপদের দিনে কেন্দ্র সরকারকে পাশে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে না। যা কিছু করা হচ্ছে তা রাজ্য সরকারের তরফেই করা হচ্ছে। গতকাল বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে আমজনতার সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁদের কাছে থেকে বেশ কিছু অভিযোগও তিনি পেয়েছেন ত্রাণ বন্টন নিয়ে। সেই সব ভুলভ্রান্তি কাটিয়ে উঠে জেলা প্রশাসনগুলিও চেষ্টা চালাচ্ছে বন্যা দুর্গত মানুষের পাশে থাকার।
Be the first to comment